‘শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার পর আমাকে আর পেছনে ফিরতে হয়নি’

রংপুর তারাগঞ্জের ছেলে জয়ন্ত রায় যখন প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি হন, তখন পড়াশোনা করে বড় হয়ে জীবনে কি হবেন এত সব বুঝতেনও না, ভাবেনও নি। কিন্তু আসতে আসতে বড় হতে হতে তাঁর প্রথম ইচ্ছা জাগল, উচ্চমাধ্যমিকে যদি শহরে পড়তে পারতেন। শহরে সরকারি আর বেসরকারি দুই ধরনের কলেজই আছে। তবে বেসরকারি কলেজে পড়ার আর্থিক সামর্থ্য সেই মুহূর্তে জয়ন্তের পরিবারের ছিল না। জয়ন্তের বাবা দরজির কাজ করতেন। পরবর্তীতে দরজির কাজ ছেড়ে দিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের ইটের ভাটায় কাজ করতে শুরু করেন। আর সেই উপার্জনেই জয়ন্তদের সংসার চলত। যেহেতু জয়ন্ত বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন, খরচটাও বেশ বেশি। সুতরাং, জয়ন্তের জন্য একটি রাস্তাই খোলা ছিল। ভালো ফলাফল করে শহরের সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে নেওয়া। এসএসসি পরীক্ষা যখন দেন তখনো জয়ন্ত ঠিক জানেন না, কতটা ভালো ফলাফল তিনি করতে পারবেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে যেই ছেলেটা এত পরিশ্রম করেছে, তাঁর তো ফলাফল ভালো হওয়া চাই। ২০০৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন জয়ন্ত।

আরও পড়ুন

ভালো ফলাফলের জন্য খুশি হবেন কী, কোথায় ভর্তি হবেন সেই অনিশ্চয়তার জন্য অস্থির থাকেন সব সময়। জীবন তাঁকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে, সেই দুশ্চিন্তায় যেন ভালো ফলাফলের আনন্দ উদ্‌যাপন করতেও ভুলে গিয়েছিল জয়ন্ত। সেই সময়ে প্রথম আলোর রংপুর প্রতিনিধি জয়ন্তর বাস্তবতা ও তাঁর ভালো ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদন করেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই জয়ন্ত ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হন। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়তে শুরু করেন।

জয়ন্ত বলেন, 'এই শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার পর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আর্থিকভাবেই হোক আর সামাজিক ভাবেই হোক প্রথম আলো ট্রাস্ট সব সময় আমার পাশে ছিল, এখনো আছে। শুধু অর্থনৈতিকভাবেই না, একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাইলে কিভাবে নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে, সেই বিষয়গুলো এখান থেকে শিখেছি। আমাদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সব সময় আমাদের পাশে থেকেছে।'

জয়ন্ত রায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে ভর্তি হয়ে ২০১৪ সালে অনার্স ও ২০১৫ সালে মাস্টার্স শেষ করেন। সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) হিসেবে কর্মরত। জয়ন্ত বলেন, ‘যেই পেশাতেই থাকি না কেন, সারা জীবন মানুষের সঙ্গে, মানুষের পাশে থেকে, মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’