মনোবল থাকলে প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে

বাড়ির কাছের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে সাত কিলোমিটার দূরে মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে হয়। প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। তখনো জানতাম না কী করব। তবে মনে আশা ছিল শহরে গিয়ে পড়াশোনা করব। কিন্তু পরিবারে আর্থিক সমস্যার কারণে সব ম্লান হয়ে যেত। বাবা দরজির কাজ করতেন। পরে দরজির কাজ ছেড়ে ইটভাটায় কাজ শুরু করেন। মা গৃহিণী। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে আমি নিজেও কাজ করতাম। তারপরও সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আজ আমি বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) হিসেবে কর্মরত। কথাগুলো বলছিলেন ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তিপ্রাপ্ত অদম্য মেধাবী’ জয়ন্ত রায়।

জয়ন্ত রায় বলেন, ‘অভাব-অনটনের সংসারে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই কঠিন ছিল। কঠোর পরিশ্রম করে ২০০৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাই। কিন্তু এই ভালো ফল করেও মনে দুশ্চিন্তা বাসা বেঁধেছে। তখন প্রথম আলোর তারাগঞ্জ প্রতিনিধি আমাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। পরে ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ পাই। এই বৃত্তি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহস করি। এভাবে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও জিপিএ-৫ অর্জন করি। আমাকে পুনরায় উচ্চশিক্ষার জন্যও শিক্ষাবৃত্তি দেয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট। এই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করেছি। এ জন্য আমি প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকের কাছে কৃতজ্ঞ।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

তাঁর ভাষায়, প্রথম আলো ট্রাস্ট আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, কীভাবে ভালো মানুষ হব সেই দিকনির্দেশনাও দিয়েছে। বিশেষ করে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক স্যারের কথাগুলো মনে পড়ে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনুপ্রেরণামূলক কথাগুলো আমাকে আরও অধ্যবসায়ী ও সাহসী হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে। আজ আমি একটি সেবামূলক পেশার সঙ্গে আছি। অনেক পরিচিত মানুষকে পরামর্শ দিয়ে বা অন্যভাবে উপকার করতে পারি। এ জন্য আমার মা-বাবা অনেক গর্ববোধ করেন।

প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে গিয়ে অনেকেই সাহস হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের উদ্দেশে জয়ন্ত রায় বলেন, ‘আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের উপলব্ধি থেকে বলছি যে একটা সুন্দর দেশ গড়ার জন্য আমাদের নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য কখনো মনোবল হারানো যাবে না। আমরা একা নই। আমাদের পাশে আছে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংক।

রংপুর জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার অদম্য মেধাবী জয়ন্ত রায় সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। তাঁর জীবনের গল্প উঠে আসে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।