‘পরিস্থিতি যাই হোক, আমি পারব—এই মনোবল থাকতে হবে’

ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া স্মৃতি মনি ইভা ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত।

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মোছা. স্মৃতি মনি ইভা। ছোট থেকেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। ইভার বয়স যখন দুই বা তিন বছর তখন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ইভাই ছিলেন একমাত্র সন্তান। বাবা মারা যাওয়ার পর মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। ইভা তাঁর দাদির কাছে বড় হন। দাদা কৃষক ছিলেন। অষ্টম শ্রেণিতে থাকার সময় দাদা মারা গেলে অনেক কষ্ট করে চলে দাদির সংসার। পরে ২০১১ সালে ডিসেম্বর মাসে (ইভার এসএসসি পরীক্ষার আগে) তাঁর দাদিও মারা যান। ইভা এতিম থেকে আরও এতিম হয়ে যান। তবে দমে যাননি তিনি। কঠোর পরিশ্রম করে তিনি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট হতে পেরেছেন। ইভার এগিয়ে চলার নানা গল্প উঠে আসে ১৫ মে ২০২৩, বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

নিজের নামের পাশে অ্যাডভোকেট যুক্ত হওয়া, কেমন লাগে জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক ভালো লাগে। আমার মতো একজন মানুষের এ পর্যন্ত আসা অনেক কঠিন ছিল। প্রত্যেকটা মানুষের কিছু না কিছু প্রতিকূলতা থাকে কিন্তু পুরো জীবনটা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যাবে এমন নয়। আমি অতিক্রম করতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোর বড় ভূমিকা আছে। এসএসসি পাসের পর আমার জীবনে আলো হয়ে আসে প্রথম আলো। আমার এগিয়ে যাওয়ার পথকে সহজ করে দেয়। শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আমার এগিয়ে যাওয়ার পথকে সহজ করার জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

একটা মানুষের যদি স্বপ্ন থাকে তাহলে সবচেয়ে বেশি দরকার আত্মবিশ্বাস— অদম্য মেধাবী স্মৃতি মনি ইভা।

পড়াশোনায় ভালো ইভা এসএসসিতে ভালো ফল করেন, জিপিএ-৫ পান। প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি তাঁকে নিয়ে নিউজ করেন। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃত্তি সহায়তায় ফুপার বাসায় থেকেই এইচএসসি পরীক্ষা দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতি নেন। এইচএসসিতে আবার জিপিএ-৫ পান। তাঁকে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এই তহবিল থেকে। ২০১৪-১৫ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কারমাইকেল কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। এখান থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত।

আরও পড়ুন

আইনে আসার ইচ্ছাটা কীভাবে হলো? এর উত্তরে ইভা জানান, ‘আসলে প্রথমে টিচিংয়ে যেতে চাইতাম। পরে দেখি— বাড়িতে যখন যাই, তখন অনেকেই দলিল দস্তাবেজ নিয়ে আসেন, বিভিন্ন মামলা নিয়ে আসেন। আমার সাধ্যমতো পরামর্শ তাদের দিতাম। তখন মনে হয়েছে—আমি যেহেতু অনেকের সহায়তায় পড়াশোনা করেছি, সেহেতু মানুষের জন্য কিছু করতে পারব, এ রকম কিছু করতে হবে। তখনই ঠিক করেছি আইন পেশায় যাব।’

চাচা-চাচি, ফুফা-ফুপিদের অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার মতো তাঁরাও স্বপ্ন দেখতে, আমি একদিন কিছু একটা হব। অনেকটা হতে পেরেছি। সে জন্য তাঁরাও অনেক খুশি। এ ছাড়া আব্দুল করিম পিন্টু ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। তাঁর দিকনির্দেশনায় আমি সঠিক পথে যেতে পেরেছি। তাঁকেও ধন্যবাদ।’

পরের স্বপ্নটা কি? এ ক্ষেত্রে ইভা বলেন, ‘অ্যাডভোকেট হয়ে একটা ধাপ শেষ করেছি মাত্র। তবে আইন পেশার শেষ ধাপ পর্যন্ত যেতে চাই।’

এখন যারা অদম্য মেধাবীরা আছে তাদের জন্য ইভার পরামর্শ হলো, ‘একটা মানুষের যদি স্বপ্ন থাকে তাহলে সবচেয়ে বেশি দরকার আত্মবিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাস অদম্য মেধাবীদের আছে। তাঁরা এটা প্রমাণ করেই এ পর্যন্ত এসেছে। আরেকটা বিষয় হলো, নেতিবাচক বিষয়ে চিন্তা না করে ইতিবাচক বিষয়গুলো দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পরিস্থিতি যাই হোক, আমি পারব—এই মনোবল থাকতে হবে।’

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন এই অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ইউটিউব চ্যানেল এবং প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক পেজ থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।