বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে মোছা. স্মৃতি মনি ইভা। ছোট থেকেই অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। ইভার বয়স যখন দুই বা তিন বছর তখন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাবা আব্দুর রহীম মারা যান। ইভাই ছিলেন তাঁদের একমাত্র সন্তান। বাবা মারা যাওয়ার পর মা জুলেখা বেগম অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। ইভা তাঁর দাদির কাছে বড় হন। দাদা কৃষক ছিলেন। অষ্টম শ্রেণিতে থাকার সময় দাদা মারা গেলে অনেক কষ্ট করে চলে দাদির সংসার। পরে ২০১১ সালে ডিসেম্বর মাসে (ইভার এসএসসি পরীক্ষার আগে) তাঁর দাদিও মারা যান। ইভা এতিম থেকে আরও এতিম হয়ে যান। অনেক কষ্টে এসএসসি পরীক্ষা দেন। এ সময় কেউ না থাকায় তাকে তাঁর ফুপুর বাসায় গিয়ে থাকতে হয়।
যা হোক, পড়াশোনায় ভালো ইভা এসএসসিতে ভালো ফল করেন, জিপিএ-৫ পান। প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি তাঁকে নিয়ে নিউজ করেন। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃত্তি সহায়তায় ফুপার বাসায় থেকেই এইচএসসি পরীক্ষা দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতি নেন। এইচএসসিতে আবার জিপিএ-৫ পান। তাকে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এই তহবিল থেকে।
২০১৪-১৫ সেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কারমাইকেল কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ সেশনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। এখান থেকে এলএলবি ও এলএলএম সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট হিসেবে কর্মরত।
স্মৃতি মনি ইভা বলেন, ‘আজকে আমি যে অ্যাডভোকেট হতে পেরেছি, তার কৃতিত্ব আমি প্রথম আলো ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংককে দিতে চাই। কারণ আমার পাশে থেকে আমার পড়াশোনার পথকে সহজ করেছে তারা। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার ইচ্ছা, মানুষের পাশে থেকে সহায়তা করব। এখন লক্ষ্য জুডিশিয়ারিতে বিসিএস দিয়ে সহকারী জজ হওয়া। সে জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে। সবাই দোয়া করবেন।’