চাকরি করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয় সানজানার

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া শ্রীমঙ্গলের মেয়ে সানাজানা হোসেন।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লালবাগ গ্রামের অসচ্ছল দরিদ্র পরিবারের মেয়ে মোছা. সানজানা হোসেন। সানজানাদের স্থায়ী ঠিকানা রংপুরের পীরগাছায় হলেও প্রায় ১৫ বছর আগে জীবিকার তাগিদে তাঁর বাবা মো. জাকির হোসেন শ্রীমঙ্গলের লালবাগ গ্রামে চলে আসেন। আট সদস্যের বড় পরিবারে দিনমজুরি করে সংসার চালান তাঁর বাবা। মা মোছা. সামছুন নাহার গৃহিণী। ছয় ভাইবোনের (৩ ভাই, ৩ বোন) মধ্যে দ্বিতীয় সানজানা দ্বিতীয়। ভাইবোনদের সবাই পড়াশোনা করে। একমাত্র উপার্জনকারী হলো বাবার পক্ষে বড় পরিবার ও ছয় সন্তানের পড়াশোনা চালানো কঠিন। তাই সানাজানার পড়াশোনা হবে কিনা এটা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়। তারপরও অদম্য ইচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রম করে পড়াশোনা চালিয়েছেন সানজানা। পরিবারের এমন অসচ্ছলতা মধ্যেও ২০২৩ সালে মানবিক বিভাগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে কলেজে পড়ার খরচ নিয়ে অনেকটা শঙ্কায় পড়ে যান। এমতাবস্থায় পাশে দাঁড়ায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশন (এমটিবি ফাউন্ডেশন)। প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সানাজানা হোসেনকে দুই বছর মেয়াদি শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা হয়।

এই শিক্ষাবৃত্তির সহায়তায় সানজানা এ বছর শ্রীমঙ্গলের দ্বারিকাপাল মহিলা কলেজে মানবিক বিভাগে থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আশা করছেন ফল হবে।

আরও পড়ুন

সানজানা বলেন, ‘আমার স্বপ্ন হলো ভালো করে পড়ালেখা করে ভালো একটা চাকরির ব্যবস্থা করা। কারণ আমার পরিবারের অবস্থা খুব নাজুক। বাবা যে কষ্ট করে আমাদের সংসার চালাচ্ছেন, তাঁর পাশে দাঁড়াতে চাই। ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ বহন করতে চাই।’

সানজানার বাবা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্য ৮ জন। আমিই একমাত্র উপার্জনকারী। আমি দিনমজুরি, বিদ্যুতের খুঁটির কাজসহ যখন যে কাজ পাই, সেটা করে সংসার চালাই। মাসিক ৬-৭ হাজার টাকা আয় হয়। এই আয় দিয়ে সংসারই চলে না। ছেলেমেয়েদের খরচ দিতে পারি না। সানজানা নিজেও টিউশনি করে যতটা সম্ভব পরিবারে সহায়তা করে। প্রথম আলো ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তি না দিলে সানজানার কলেজের ফিস, বইপত্র কেনা সম্ভব হতো না।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া শ্রীমঙ্গলের মেয়ে সানাজানা হোসেন।

সানজানার বাবা আরও বলেন, ‘প্রথম আলো ট্রাস্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংককে অনেক ধন্যবাদ। মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা না থাকলে আমার পক্ষে মেয়ের খরচ দেওয়া সম্ভব ছিল না। আমার মেয়েটা মেধাবী, আমি অনেক খুশি যে, সে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।’

উল্লেখ্য, নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করছে এমটিবি ফাউন্ডেশন। এ উপলক্ষে এমটিবি ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলো ট্রাস্টের মধ্যে দুই বছর মেয়াদি এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০২৪ সালের ৪ মার্চ মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির করপোরেট হেড অফিসে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই বছর মেয়াদি এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ৫ জন অসচ্ছল মেধাবী নারী শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া শুরু হয়।