উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত
মনের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার খবরের প্রভাব ও করণীয়
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। এ ঘটনায় সারা দেশে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হয়েছে। আহতরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়াসহ অন্যান্য মিডিয়াতে ভয়াবহ মুহূর্তের ছবি, ভিডিও ছাড়া হয়েছে এবং হচ্ছে। যেগুলো দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরে শিক্ষার্থী রবিউল হাসান কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। রবিউল হাসান বর্তমানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ট্রেইনি সাইকোলজিস্ট হিসেবে যুক্ত আছেন। তিনি ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিস্তারিত পড়ুন তাঁর লেখায়।
সম্প্রতি একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় স্কুল ভবনের ওপর প্লেন ভেঙে পড়লে বহু শিশু শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকের মৃত্যু হয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ভয়াবহ মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। কেউ ইচ্ছা করে, কেউ আবার না চাইলেও সেই ভিডিওর মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেকেই ভিডিও দেখে আতঙ্কিত, বিষণ্ন কিংবা মনঃসংযোগহীন হয়ে পড়ছেন যা একধরনের মানসিক ট্রমা।
আমরা অনেক সময় ভাবি, ভিডিও তো শুধু একটি স্ক্রিনে দেখা দৃশ্য—এতে এমন বা কী হবে? অথচ বাস্তবতা হলো, মস্তিষ্ক অনেক সময় ভিডিওতে দেখা ঘটনাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা হিসেবেই গ্রহণ করে। এর ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন বাড়ে, মুড বদলায় এবং মনে স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হতে পারে।
বিশেষ করে যারা আগে থেকেই সংবেদনশীল বা যাদের মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে, তাঁদের জন্য এ ধরনের ভিডিও আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। শিশু-কিশোরদের ওপর তো প্রভাব আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
তাহলে করণীয় কী?
করণীয় হলো—
• ভিডিও দেখবেন না, নিজেকে রক্ষা করুন: যদি আপনি বুঝতে পারেন এই ধরনের ভিডিও আপনার মনে অস্বস্তি তৈরি করছে, তাহলে তা দেখা থেকে বিরত থাকুন।
• সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু সময় বিরতি নিন: মানসিক স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে নিজেকে কিছু সময় ‘ডিজিটাল ডিটক্স’-এ রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নিজেকে দুরে রাখার চেষ্টা করুন।
• অনুভূতির প্রতি সৎ থাকুন: আপনি যে ভয়, উদ্বেগ বা মন খারাপ অনুভব করছেন, সেটি স্বাভাবিক। বিষয়টি অস্বীকার না করে কারও সঙ্গে কথা বলুন, প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
• শিশুদের এই সকল কনটেন্ট থেকে দূরে রাখুন: বাচ্চারা না বুঝেই এই ভিডিও দেখে ভয় বা দুঃস্বপ্নে ভুগতে পারে। তাদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। তাদের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন।
• নিজে শেয়ার না করে সচেতনতা ছড়ান: আমরা চাইলে এই ধরনের ভিডিওর ভাইরাল হওয়া বন্ধ করতে পারি। ভয়াবহ কনটেন্ট ছড়ানোর বদলে সহানুভূতি আর সাহায্যের বার্তা ছড়িয়ে দিন। সহমর্মিতা প্রকাশ করুন। যেসব ভিডিও সেনসেটিভ সেই সকল ভিডিও অন্যকে শেয়ার করা, নিজের ফেসবুকে শেয়ার করা বা এই সব টপিকে গল্প করা কমিয়ে দিতে পারেন। যেকোনো কনটেন্ট শেয়ার করার আগে এর সত্যতা যাচাই করুন।
• প্রয়োজনে সহায়তা নিন: যদি মনে হয় এই পরিস্থিতি আপনি একা সামাল দিতে পারছেন না, তাহলে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সহায়তা নিন।
আমরা অনেক সময়ই ভাবি, মানসিক আঘাত কেবল বাস্তব ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু ডিজিটাল পরিসরে ছড়িয়ে পড়া এই সব ট্র্যাজিক ভিডিওও মনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রযুক্তির এই সময়ে শুধু নিজের শারীরিক নয়, মানসিক সুরক্ষার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি।