চাক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করতে চান শিমি

আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষা বৃত্তিপ্রাপ্ত চাক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মেয়ে শিমি চাক।

প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন 'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে এ পর্বের অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার চাক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মেয়ে শিমি চাক। তিনি ২০১৮ সালে আইডিএলসি-প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ শিক্ষাবৃত্তি পান। সম্প্রতি চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) পরিবেশ বিজ্ঞান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি।

এখন একটাই ইচ্ছা তাঁর, বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে থেকে স্নাতকোত্তর করার। জলবায়ু পরিবর্তন ও নিজ কমিউনিটি উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চান শিমি। চাক সম্প্রদায়ের এই মেয়ের পথ চলার নানা বিষয় ওঠে এল ২৬ জুন ২০২৩, সোমবার, বিকেল ৫টায় প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়ার গল্প’ অনলাইন অনুষ্ঠানে।

'অদ্বিতীয়ার গল্প' অনুষ্ঠানে এ পর্বের অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার চাক ক্ষুদ্র ‍নৃ-গোষ্ঠীর মেয়ে শিমি চাক।

শিমি চাক তাঁর কমিউনিটির ৪ হাজার চাক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম কেউ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে এসেছেন। তিনি তার পরিবারেরও প্রথম স্নাতক (সম্মান) সম্পন্নকারী নারী।

এইউডব্লিউর যাত্রা, অদ্বিতীয়া হওয়ার গল্প বলতে গিয়ে জানান, ‘ছোট থেকেই বাবা-মা অনেক সাপোর্ট করেছেন। কলেজ পাস করার পর এইউডব্লিউ সম্পর্কে জানতে পারি। কিন্তু এখানে অনেক টাকার প্রয়োজন হয় স্নাতক পড়ছে। এত টাকা তো আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব না। পরে জানতে পারি, বৃত্তির ব্যবস্থা আছে। সেই ভরসায় পরীক্ষা দেই, পাস করি। ভাইভায় কৃতকার্য হয়ে ভর্তির সুযোগ পাই, বৃত্তিও পাই।’

আরও যুক্ত করে শিমি বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের প্রথম তো বটেই, আমার কমিউনিটির প্রায় ৪ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম এইউডব্লিউতে আসতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে বাবা-মা অনেক সাপোর্ট করেছে। তবে অনেক প্রতিবেশীরা বলেছে, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত. . । তবে আমার চাচা, মামারাও সাপোর্ট করেছে।’

এইউডব্লিউর অভিজ্ঞতা কি? জানতে চাইলে শিমি জানান, ‘প্রথমে একটু সমস্যা হয়েছে কারণ আমি বাংলা মাধ্যমের ছিলাম। বিভিন্ন দেশের প্রফেসর, ক্লাসমেটদের একসেন্ট বিভিন্ন রকম, তাই বুঝতে কষ্ট হয়েছে। তবে আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে গেছে। আর কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে…, আগে তো ইংরেজির ব্যবহার তেমন করতে হয়নি। কিন্তু এইউডব্লিউতে আসার পর ইংরেজির অনুশীলন করেছি। এখানে কেউ জাজমেন্ট করে না, তাই কোনো ধরনের হেজিটেশন ছাড়াই ভাষার চর্চা করা যায়, যা অনেক হেল্পফুল। সিনিয়ররাও অনেক বন্ধুসুলভভাবে সহযোগিতা করে।’

আরও পড়ুন

প্রথম বর্ষের শিমি আর এখনকার শিমির মধ্যে পার্থক্য কি? এর উত্তরের তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবর্তন। প্রথমে অনেক নার্ভাস ছিলাম। এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী। এখন পাবলিক প্ল্যাটফর্মে সহজেই পারফর্ম করতে পরি।’

এখন কি স্বপ্ন দেখে শিমি, জানতে চাইলে বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করতে চাই। আবেদন শুরু করেছি। যদি সেটা না হয়, তাহলে এনজিওতে কাজ শুরু করব। তা ছাড়া আমার কমিউনিটির চাক-জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য কাজ করব। চাক-জনগোষ্ঠীকে তুলে ধরব।’

পরিবারে অনুভূতি সম্পর্কে শিমি বলেন, ‘মা সবচেয়ে বেশি খুশি। আমার যেকোনো অর্জনেই মা খুশিতে লাফালাফি করেন। তারপর বাবা ও ভাই, তারাও খুব খুশি।’

এখন যারা অদ্বিতীয়া আছে তাদের জন্য শিমির পরামর্শ হলো, ‘কখনো হাল ছাড়া যাবে না। যেকোনো প্রয়োজনে সিনিয়র, প্রফেসরসহ সবার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে হবে। কথা বলতে হবে, পারফর্ম করতে হবে। আমার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পরো। আমি সব সময় ওপেন। কোনো প্রয়োজনে হেল্প করতে পারলে খুশি হব।’

অনুষ্ঠানটি একযোগে সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল থেকে। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবাসুলতানা।