‘শুয়ে থাকলেও ঘুম না আসার সমাধান কী’

কর্মশালার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রথম আলো বন্ধুসভা। কর্মশালা শেষে ৮০ শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুসভার উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন বিভাগের ৮০ শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মিলনায়তনেছবি: মোশাররফ শাহ

‘পাঁচ ঘণ্টা শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসে না, এর সমাধান কী?’ ‘মনোযোগ দিয়ে পড়লেও মনে থাকে না, অথচ অপ্রয়োজনীয় অনেক বিষয় মনে থাকে, এর কারণ কী?’ ‘কোনো কারণ ছাড়া অস্বস্তি লাগে, এটা কি মানসিক অসুস্থতা?’ এমন আরও জটিল প্রশ্নের উত্তর উঠে এল প্রথম আলো বন্ধুসভার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মশালায়।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের মিলনায়তনে এ কর্মশালার আয়োজন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা প্রথম আলো বন্ধুসভা। সকাল ১০টায় অতিথিদের বক্তব্যর মধ্য দিয়ে কর্মশালাটি শুরু হয়। শেষ হয় বেলা আড়াইটায়। এটি পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহীনুর রহমান ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক পঞ্চানন আচার্য। তাঁরা শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন। কর্মশালা শেষে বিভিন্ন বিভাগের ৮০ শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী পর্বে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বন্ধুসভার সভাপতি রাহী হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অতিথির বক্তব্য দেন জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সভাপতি নাজনীন নাহার ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাইলুন নাহার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তাসনিম মুশাররাত প্রমুখ।

কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহীনুর রহমান। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যায় মারা যাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর এ সংখ্যা সাত লাখ তিন হাজার। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশই বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের। অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে; অর্থাৎ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। পত্র-পত্রিকার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশে গত বছর ৫৮৫ শিক্ষার্থী আর চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত ৩৬১ জন আত্মহত্যা করেছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আঁচলের হিসাবে, আত্মহত্যা করা ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী।

জটিল প্রশ্নের মিলল উত্তর

কর্মশালার একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সহকারী অধ্যাপক পঞ্চানন আচার্য। এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, ‘ঘুমানোর পরিবেশ আছে, কিন্তু পাঁচ–ছয় ঘণ্টা শুয়ে থাকার পরও ঘুম আসছে না। এর কারণ কী?’ এর জবাবে পঞ্চানন আচার্য বলেন, ‘ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে। ধরা যাক, আপনি রাত ১১টায় ঘুমিয়ে সকাল ৭টায় উঠবেন। এ ক্ষেত্রে ১১টায় ঘুম না এলেও শুয়ে পড়তে হবে। আর ঘুম পূর্ণ না হলেও সাতটায় উঠতে হবে। সারা দিন আর ঘুমানো যাবে না। এমনটি হলে শরীরে ঘুমের জন্য একধরনের ঘড়ি ঠিক হবে।’

এরপরও যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে থেকে ফোন, ল্যাপটপ চালানো বাদ দিতে হবে, শুয়ে পড়ার ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না হলে উঠে হাঁটতে হবে, অথবা হালকা মেজাজের বই পড়তে হবে। এভাবে ঘুম না আসা পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিছানায় অন্য কোনো কাজ করা যাবে না, বিছানা শুধু ঘুমের জন্য ব্যবহার করতে হবে।

আরেক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করেন, ‘মনোযোগ দিয়ে পড়লেও মনে থাকে না, এর কারণ কী?’ এর জবাবে পঞ্চানন আচার্য বলেন, ‘এর কারণ হচ্ছে, আমরা আমাদের মনকে বাধ্য করি। এটি করা যাবে না। মনে রাখতেই হবে, এমন প্রত্যাশা রাখা যাবে না। পড়তে পড়তেই শিখব, এমনভাবে পড়তে হবে। সময় দিতে হবে। বাড়তি চাপ নেওয়া যাবে না।’ কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ফারিয়া আক্তার।