প্রথম আলো চরের বজলুর রহমান পেল জিপিএ-৫
প্রথম আলো চর কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে দুধকুমার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের মোহনায় অবস্থিত দুর্গম একটি চর। এই চরেই প্রথম আলো ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত হয় প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা। চরের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা এই পাঠশালা থেকে পড়াশোনা করে প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এ বছর পাঠশালা থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে চারজন উত্তীর্ণ হয়। ফজলুর রহমান বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে জিপিএ-৫ অর্জনের পেছনে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
এই চরে আলোর পাঠশালা ছাড়া শিক্ষা অর্জনের আর তেমন মাধ্যম নেই। টিউশনি বা অন্য কোন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আলোর পাঠশালা শিক্ষকদের প্রচেষ্টা এবং পিছিয়ে পড়া চরের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহের ফলে এখানকার শিশু-কিশোরেরা শিক্ষার পথে যাচ্ছে। তারই ফল ফজলুর রহমান। সে শুধু পাঠশালায় পাঠ গ্রহণ করেই এ ফলাফল অর্জন করেছে।
এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জনাব সোবহান ব্যাপারী বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় এ পাঠশালা থেকে আমরা ধারাবাহিক ফলাফল পাচ্ছি। এতে আমরা সন্তুষ্ট। চরের প্রবীণ ব্যক্তি ফজলার রহমান বলেন, আগে চরের শিশুরা মাঠে গরু চড়াত, নদীতে মাছ ধরত এখন তারা পাঠশালা থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করছে। এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে।
ফজলুর রহমান তার ফলাফল শুনে উল্লসিত হয়ে পড়ে। তার ফলাফলের খবর শুনে পুরো চরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। ফজলুর জানায়, ‘আমার এই সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে আমার প্রিয় শিক্ষকদের সঠিক দিক নির্দেশনার ফলে। তাঁরা সব সময় আমার পড়াশোনার ব্যাপারে খবর নিয়েছেন। আমিও স্যারদের কথামতো পড়ালেখা করেছি।’
ফজলুর রহমান পড়ালেখার পাশাপাশি, বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্ম করেছে। বাল্যবিবাহের কুফল, মাদকের ভয়াবহতা ইত্যাদি সম্পর্কে সে সচেতনতামূলক কাজ করেছে। এ ছাড়া কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক, কুইজ প্রতিযোগিতা ইত্যাদিতে পারদর্শী।
অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক জনাব আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আসছে। তবে এবারই প্রথম আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ অর্জন পেয়েছে। ফজলুর রহমান তার মেধার পরিচয় দিয়েছে। এ জন্য পাঠশালার পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই। একই সঙ্গে প্রথম আলো ট্রাস্টকেও ধন্যবাদ জানাই। প্রথম আলো ট্রাস্ট এবং সামিট গ্রুপের সহায়তার ফলে সুবিধাবঞ্চিত চরের শিশুরা আজ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। এটা আমাদের জন্যও গর্বের।’