চরের আলো রবিউল এইচএসসিতেও সফল

প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার সাবেক শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম।

প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার সাবেক শিক্ষার্থী মো. রবিউল ইসলাম। সে এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। আজ প্রকাশিত ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। রবিউলের বাবা মো. আ. রশিদ পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তার মা মোছা. রহিমা বেগম একজন গৃহিণী। তার দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে রবিউল সবার ছোট। কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা চর কাপনায় তার বাড়ি। দারিদ্র্য ও চর কাপনায় বিদ্যালয় না থাকায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে সে তার বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করত। বাবার রোজগার দিয়ে কোন রকম চলতো রবিউলের পরিবার।

যদিও পারিবারিকভাবে পড়াশোনায় সুযোগ পায়নি, তবুও পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল রবিউলের। একদিন বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করছিল। এ সময় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত প্রথম আলো চর চর আলোর পাঠশালার শিক্ষক মো. আ. কাদের স্যারের সঙ্গে দেখা। তিনি তার বাবার সঙ্গে অনেক কথা বলেন পড়াশোনার বিষয়ে। প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় তাঁর ছেলেকে ভর্তি করার জন্য অনুরোধ করলেন। পরের দিন তিনি তাঁর ছেলেসহ প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় আসেন এবং ভর্তি করে দেন।

আরও পড়ুন

পরবর্তীতে পাঠশালার সকল শিক্ষকদের সহযোগিতায় পড়াশোনায় ভালো করতে শুরু করে রবিউল। ২০১৮ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৪.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। করোনাকালীন সময়ের জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় একটা আক্ষেপ ছিল। এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পাঠদান না থাকায় বাসাতেই পড়াশোনা চালিয়ে যায় সে। এভাবে চলতে থাকে তার পড়াশোনা। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় রবিউল। আলোর পাঠশালায় এসএসসি পরীক্ষার স্বীকৃতি না থাকায় সে ভিতরবন্দ জে ডি একাডেমি থেকে অংশগ্রহণ করে। যদিও তাকে পড়ানো হয় অত্র পাঠশালায়। সবগুলো পরীক্ষা ভালোভাবে দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

এসএসসিতে ভালো ফল করে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায় তার। কিন্তু কলেজে পড়ার খরচ কিভাবে মেটাবেন এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। এমতাবস্থায় তাকে প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় সানিডেইলের সহযোগিতায় অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। বৃত্তি পেয়ে সে আরও পড়াশোনার প্রতি উৎসাহী হয়। এর পর সে ভিতরবন্দ ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। ট্রাস্টের সহায়তায় তার পড়াশোনা চলতে থাকে। এই কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ভালো ফলাফলে খুবই খুশি রবিউল।

পরবর্তী লক্ষ্য কি জানতে চাইলে রবিউল জানায় ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়। সেই লক্ষ্যেই পড়াশোনা করছি।’