চর কাপনার মেধাবী ছাত্র রবিউল ইসলাম

রবিউল ইসলাম

কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার প্রথম আলো চরের পাশেই ছোট্ট একটা চর নাম 'চর কাপনা'। এই চরের ছাত্র মো. রবিউল ইসলাম। একদিন সে তার বাবার সঙ্গে মাঠে কাজে ব্যস্ত ছিল। এসময় প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদেরের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। ওই সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বাসায় বাসায় গিয়ে হোম ভিজিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তারপরও রবিউলের বাবার কাছে জানতে চাইলেন কেন তিনি ছেলেটিকে শিশু শ্রমে নিয়োজিত করেছেন। তিনি বলেন ‘চর-কাপনার আনন্দ স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল ।এরপর হঠাৎ করে স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেল। তারপর আবার অভাবের তাড়না, দিন এনে দিন খেতে হয়। তাই ছেলেটাকে আমার সঙ্গে কাজে রাখছি।’

সব কথা শুনে আলোর পাঠশালার শিক্ষক আব্দুল কাদের ছেলেটিকে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালায় এনে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। রবিউল ইসলাম নিয়মিত পাঠশালায় আসতে শুরু করে। পড়ালেখায় সে অনেক ভালো। বিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা সব সময় মেনে চলে। ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থী থেকে সে নিয়মিত শিক্ষার্থীতে পরিণত হলো। ধীরে ধীরে তার পড়ালেখায় অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। রবিউল প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ৪.৬৭ জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর আলোর পাঠশালায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি এবং শ্রেণি ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হন। বার্ষিক পরীক্ষায় সে প্রথম স্থান অধিকার করে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। এভাবে অষ্টম শ্রেণিতেও উত্তীর্ণ হন তিনি।

রবিউল ইসলাম

পড়ালেখার পাশাপাশি রবিউল খেলাধুলায়ও সম্পৃক্ত ছিলেন। ফুটবল এবং ক্রিকেট উভয় খেলায় তার পারদর্শিতা লক্ষ্য করা যায়। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে অনেক খেলায় প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা সুনাম কুড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকে, কিন্তু করোনা মহামারি তার জীবন চলার গতি রোধ হয়ে পড়ে। তবু তিনি দমে যাননি। করোনা মহামারির কারণে জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় অটো পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন রবিউল। আলোর পাঠশালা থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায় না, তাই কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ যোগেন্দ্রনাথ ধিরেন্দ্রনাথ একাডেমিতে নবম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন রবিউল । প্রথম স্থান অধিকার করে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। দশম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন রবিউল।

রবিউল ইসলামের বাবা বলেন, ‘হামার ছাওয়ালডা এত্তো মেধাবী, আগোত বুঝবার পারি নাই। ছাওয়ালডারে আর কামলা বানামু না।’ প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘রবিউল ছেলেটা অত্যান্ত মেধাবী, সমায়ানুবর্তী এবং প্রাণচঞ্চল। সে পাঠশালায় আমাদের সকলের আস্থা অর্জন করেছে। আমরা সব সময় তার খোঁজ খবর নেই। তার পড়ালেখায় যেকোনো সহযোগিতা দানে আমরা প্রস্তুত।

রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পড়ালেখা শেষে আমি দেশের সেবা করতে চাই। দুর্গম চরাঞ্চল, অসহায় মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে চাই।’