‘হাত পাতিয়া কি সংসার চলে’

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে রংপুরে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ও বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল গঙ্গাচড়ার চর ইচলি এলাকায়মঈনুল ইসলাম

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার চর ইচলি গ্রামের আবেদ আলীর (৫৭) পরিবারের তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী। স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। এ পর্যন্ত তিনবার তিস্তার ভাঙনে ঘর গেছে। এ বছর তিন দফা বানের পর নদীর ভাঙন শুরু হলে ঘরের টিন–বেড়া সরিয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে রেখেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ঘরটা তুলতেও পারেননি। খাবারই জুটছে না, ঘর ঠিক করবেন কী করে! এখন অন্যের বাড়িতে থাকছেন।

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চর ইচলি গ্রামের ১০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ পেয়ে আবেদ আলী বললেন, ‘প্যাটোত ভাত জোটে না, খ্যাতোত কোনো কামও নাই। হামরাগুলা এই গেরাম থাকিয়া কুমিল্লায় কামোত গেছনো। এবার কী একটা ব্যারাম আসিল, কামও বন্ধ। বলা চলে অ্যালা হামরা না খ্যায়া আছি। হাত পাতিয়া কি আর সংসার চলে!’

রংপুরের শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের চর ইচলি গ্রামটির মানুষজন বারবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এবারের তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙনে অধিকাংশ পরিবারের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে। অনেকেই সড়কের পাশে অস্থায়ী আবাস গড়েছে। কেউ এখনো ঘর তুলতেও পারেনি। এসব মানুষজনের পেশা দিনমজুরি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় কাজ করতে যান তাঁরা। কিন্তু এই করোনাভাইরাসের কারণে এবার কেউই কাজে যেতে পারেননি। তার ওপর নদীভাঙন ও তিন দফা বন্যায় একেবারে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

গতকাল সড়কের পাশে একটি উচু স্থানে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণের প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, আলু ও লবণ। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুস সামাদ, রংপুরের প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি অপূর্ব কৃষ্ণ রায়, সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আবেদীনসহ বন্ধুসভার সদস্যরা।

প্রতিবছরই তিস্তা নদীর ভাঙন হয়। তবে এবার তিন দফা বন্যা ও ভাঙনের মাত্রা ছিল অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। স্বচ্ছল অনেকেই এবারের বন্যা ও ভাঙনে কৃষিজমি–ভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তুর মতো রাস্তার পাশে বাস গেড়েছে। গতকাল এমন পরিবারদের খুঁজে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। নদীভাঙনের শিকার রহিমা বেগম (৫০) বলেন, ‘একসময় হামার আবাদি জমি আছলো। জমির ধানের ভাত খাছনো। এলা নদী হামার শোগ শেষ করি দিছে। এলা ভাতও জোটে না।’

আরেক নদীভাঙনের শিকার উজ্জ্বল মিয়া (৪০) বলেন, ‘বাড়িত চারজন খাওয়াইয়া। এলা যে এটে-ওটে কাজ করি চলমো তারও উপায় নাই। এই করোনাত শহরোত কায়ও কাজোত নেয় না। আর গ্রামোতও কাম নাই। মানুষের কাছোত হাত পাতিয়া এক বেলা খাবার জুটলেও অন্য বেলা না খায়া থাকা লাগে।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম : প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর : ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।