সুখী বেগমদের দুঃখের জীবন

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়। ত্রাণ নিয়ে আশ্রয়স্থলে যাচ্ছেন গ্রামবাসী। গতকাল বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের আউচারপাড়া চরে।ছবি: প্রথম আলো

বড় ঘর দেখেই ৫৫ বছর আগে সুখী বেগমের বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের কাকালিহাতা চরে স্বামী হাসেম আলী শেখের সংসার তখন ভরভরন্তি। পাকা বসতঘর, গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু—সব মিলিয়ে সুখী বেগমের সুখের সংসার। এরপর দফায় দফায় যমুনার ভাঙনে পরিবারটি নিঃস্ব হয়েছে। দেড় দশক আগে স্বামীকেও হারিয়েছেন। এখন ছেলেরা আর কেউ সুখী বেগমের খোঁজ নেন না। সর্বশেষ কয়েক বছর আগে সুজনেরপাড়া চরে কুঁড়ে তুলে থাকছিলেন। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে পেট চালিয়ে নিচ্ছিলেন।

এবারের বন্যায় যমুনার ভাঙনে সেই কুঁড়েটুকুও হারিয়েছেন। ৭০ বছরের সুখী বেগমের এখন দুঃখের শেষ নেই। গতকাল সোমবার সুখী বেগম এসেছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া ত্রাণ নিতে। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘৫০ বছরত ১৫ বার ঘর ভাঙচে যমুনা। সোয়ামি মরার পর আচনো সুজনেরপাড়া চরত। সেটিও লদীত ভাঙল। এখন ব্যাটারা খোঁজ লেয় না, কোনোরকমে গুচ্ছগাঁওত আসি আচি। মানুষের বাড়িত চায়্যাচিন্ত্যা খাই। ৩ মাসে ১৬ সের চাউল ইলিপ পাচনো। চাউল সিদ্ধ কর‍্যা পান্তাভাত খাচি।’

গতকাল সারিয়াকান্দির আউচারপাড়া চরে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এই ত্রাণ বিতরণ করেন প্রথম আলো বগুড়া বন্ধুসভার সদস্যরা। সুখী বেওয়ার মতো বন্যা-নদীভাঙনে সহায়–সম্বল হারানো চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের ১০০ পরিবারকে গতকাল ত্রাণ দেওয়া হয়।

ভিকনের পাড়া চরের আলতা বিবিও (৬০) যমুনার ভাঙনে কয়েক বছর আগে বসতঘর, আবাদি জমি হারিয়ে সুজনের পাড়া চরের গুচ্ছগ্রামে ঠাঁই নেন। ত্রাণ নিতে এসে তিনি বলেন, ‘বন্যা আর লদী ভাঙ্গনত এইবার সগলির মাঞ্জা ভাঙ্গে শ্যাষ।’

আউচারপাড়া ও উত্তর শিমুলতাউড় চরে ২ মাস আগেও প্রায় ৭০০ পরিবারের বসতঘর ছিল। ছিল দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক, আউচারপাড়া উচ্চবিদ্যালয় ও আউচারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন এই দুই চরে বসতির চিহ্ন নেই। যমুনায় বিলীন হয়েছে লোকালয়, বসতি— সবকিছু।

আউচারপাড়া চরও ভাঙ্গে শ্যাষ। খালিহাতে সুজনের পাড়া গুচ্ছগাঁওত আসে উঠচি। চরত কাম নাই, কামাই নাই।
জয়নাল মণ্ডল, যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া চরের দিনমজুর

যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হওয়া চরের দিনমজুর জয়নাল মণ্ডল (৬৫) বলেন, ‘আউচারপাড়া চরও ভাঙ্গে শ্যাষ। খালিহাতে সুজনের পাড়া গুচ্ছগাঁওত আসে উঠচি। চরত কাম নাই, কামাই নাই।’

প্রথম আলোর ত্রাণ তহবিলে সোমবার পর্যন্ত মোট ৪২ লাখ ২৫ হাজার টাকা জমা পড়েছে। এ পর্যন্ত মোট খরচ ২৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। বর্তমানে জমা আছে ১২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। গত কিছুদিনে বন্যার জন্য অনেকে ত্রাণ তহবিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা জমা দিয়েছেন। অফিসে এসে যারা অনুদান দিয়েছে, তাদের মধ্যে আছে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিস অব বাংলাদেশ এক লাখ টাকা, সুপার স্টার গ্রুপ এক লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে মুহাম্মদ মাহফুজ সামদানী দুই লাখ টাকা।