সাফল্য ছিনিয়ে আনা অদম্য মেধাবী নাদিম মাহমুদ

নাদিম মাহমুদ

প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় সফলতা অর্জনকারী এক অদম্য মেধাবী নাদিম মাহমুদ। তিনি এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার হরিপুর মিয়াপাড়া মহল্লার রিক্সাচালক বাবা আব্দুল বারির দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে তিনি। তাঁর স্বপ্ন, একদিন বড় চিকিৎসক হয়ে অসহায় মানুষের সেবায় নিয়োজিত হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই হাটছেন নাদিম মাহমুদ। তাঁর বাবা আব্দুল বারি বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় চলাফেরা করতে পারেন না।

নাদিম মাহমুদের শুরুর গল্পটা অন্যরকম। রিক্সাচালক বাবা দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর আগের মতো আর কাজ করতে পারতেন না। অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। ওইসময় তিনি দিনে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা আয় করতেন। তাই নাদিম মাহমুদকেও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থা থেকেই রাজমিস্ত্রির যোগালীর কাজ করে সংসারে আর্থিক সাহায্য করতে হতো। পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যেতেন পুরোদমে। ২০১৫ সালে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। তাঁর সেই অদম্যের গল্প ছাপা হয় প্রথম আলো পত্রিকাতে। ফলে এইচএসসি পর্যায়ে দুই বছর প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি পান তিনি। কিন্তু এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষায় অল্পের জন্য ছুটে যায় জিপিএ-৫। পান জিপিএ-৪ দশমিক ৯২। এতে করে তাঁর ও বাবা-মায়ের মুখটা মলিন হয়ে যায়। বড় একটা ধাক্কা নিয়ে কঠোরভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে ডাক্তারি পড়ার জন্য। কঠোর পরিশ্রম ও শক্ত মনোবলের ফলে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনে। মুখে ফুটে ওঠে তৃপ্তির হাসি। সকলের মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে রিক্সাচালকের ছেলে হয়ে মেডিকেলে পড়াশোনার বিষয়টি। এতে তাঁর বাবার বুকটাও গর্বে ফুলে ওঠে। চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক ছিটকে পড়ে।

নাদিম মাহমুদ

এসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য পেয়ে তিনি মেডিকেল কলেজে ভর্তির কাজ সম্পন্ন করেন। তবে দুশ্চিন্তায় পড়েন পড়াশোনার খরচ চালানোর বিষয়টি নিয়ে। ওই সময় তিনি প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি না পেলেও ট্রাস্টের কল্যাণেই এক ব্যক্তি তাঁকে পড়াশোনার খরচ বাবদ প্রতি মাসে তিন হাজার করে টাকা দিতে থাকেন। এতে তাঁর মেডিকেলে পড়ার পথ একটু সুগম হয়। পরবর্তীতে একটি সংস্থা থেকেও মাসিক পাঁচ হাজার টাকা করে বৃত্তি পান তিনি। এ দুটো বৃত্তির পাশাপাশি তিনি টিউশনি করাতে থাকেন। এসকল আয় থেকে তিনি পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি বাড়িতেও খরচ পাঠান। এ ছাড়া তাঁর ছোট ভাইও এবার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সেও পড়ালেখার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির যোগালীর কাজ করে সংসারে কিছুটা সহযোগিতা করে থাকে।

এ ব্যাপারে নাদিম মাহমুদ বলেন, 'আমি একজন ভালো চিকিৎসক হতে চাই। সামর্থ্যহীন রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাতে চাই। কোন গরীব রোগী টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে আমার কাছ থেকে ফিরে যাবে না বলে আমার বিশ্বাস রয়েছে। সকলে আমার জন্য দোয়া করবেন।'