সাত দফা বন্যায় বিপর্যস্ত জীবন

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সিলেটে জাফলংয়ের আসামপাড়া গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা ডাউকি সিলেটের জাফলংয়ে এসে মিলেছে পিয়াইন নদের সঙ্গে। একসময়ের খরস্রোতা নদটি এখন নাব্যতা হারিয়েছে। পাহাড়ি ঢল নামলেই তীর উপচে আশপাশের এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। এ বছর এক মৌসুমে সাত দফা বন্যায় নাকাল হতে হয়েছে পিয়াইনপারের মানুষগুলোকে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের আসামপাড়া গ্রামের মানুষগুলো করোনার মধ্যে দফায় দফায় বন্যায় চরম কষ্টে পড়েছে। এই গ্রামের কৃষক বাবুল মিয়া চারবার আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন। শেষের তিন দফা বাড়িতেই ছিলেন। সাতবারের বন্যায় জর্জরিত বাবুল মিয়া বলেন, ‘সাতবার পানি উঠল কেনে, এই কারণটা বাইর না করলে আমরার আর বাঁচার উপায় নাই।’ প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণসহায়তা নিতে এসেছিলেন বাবলু মিয়া। ত্রাণ নিতে আসা মানুষগুলো দফায় দফায় বন্যা থেকে প্রতিকারে ব্যবস্থা নিতে আকুতি জানান।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গোয়াইনঘাটের হাজি সোহরাব আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দেওয়া ত্রাণ বিতরণ করেন সিলেটের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। ত্রাণ কার্যক্রমে আরও অংশ নেন হাজি সোহরাব আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. সোহরাওয়ার্দী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ। ত্রাণসামগ্রীর প্রতিটি প্যাকেটে ছিল চাল, আলু, ডাল, পেঁয়াজ, তেল।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আসামপাড়া ও নয়াখণ্ড গ্রামের চারটি মহল্লার ১০০ জনকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়। আসামপাড়া জাফলংয়ের পিয়াইন নদের ভাটির দিকের একটি গ্রাম। বসতি এলাকা নদের তীরে হওয়ায় ভারী বৃষ্টি হলেই বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। আতাউর রহমান নামের একজন কৃষিজীবী বলেন, বন্যা–পরবর্তী সময়ে ফসলি জমিতে বালুর স্তর পড়েছে। এ সমস্যায় অনেকে জমিতে আমন ফসল ফলাতে পারছেন না। সাত দফা বন্যার ধকল সইতে না পেরে কৃষি ছেড়ে অন্য কোনো পেশায় জড়িত হওয়ার চিন্তা করছেন নয়াখণ্ড গ্রামের আবুল হোসেনও।

পিয়াইন নদের সেতু এলাকায় বসবাস করেন রহিমা খাতুন। স্বামী, মা ও তিন মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। রহিমাও শ্রমজীবী। নদ থেকে বালু তোলার কাজ দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে করেন। বন্যায় সাতবারই ঘরছাড়া হতে হয়েছিল জানিয়ে রহিমা বলেন, ‘আমরারে করোনা না, বইন্যায় কোমড় ভাঙছে। কাম করি চলি, হাতে তো কোনো কাম নাই। হাত পাতি আর ধারদেনা করি চলছি। সামনের দিন কী করে চলমু, তা ভাবতেই পেরেশানির মইধ্যে পড়ি।’