লেখাপড়া করে ঘুরে দাঁড়িয়েছি

‘আমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি, তখন শরীরে অ্যাসিড ছোড়া হয়। সেই অ্যাসিডে ঝলসে যায় গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। তখন ভেবেছিলাম, জীবন শেষ হয়েই গেল। হয়তো আর বাঁচব না, নয়তো পঙ্গু হয়ে বাঁচতে হবে।’এ কথাগুলো মারজিয়া আক্তারের। পারিবারিক শত্রুতার জের ধরে অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন তিনি।

মারজিয়া আক্তার গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার টোকনগর গ্রামের আবুল কাশেমের মেয়ে। এখন টোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

২০০১ সালের ঘটনা। মারজিয়া আক্তার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুলে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলছে। ভালো শিক্ষার্থী হিসেবে এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন স্কুলে ও পরিবারে। রাত ১১টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে তিনি সবে ঘুমিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই হঠাৎ তীব্র জ্বালাপোড়া তাঁর মুখে।

মারজিয়া বলেন, ‘লেখাপড়া করে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এখন আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে বেশির ভাগ মেয়েই আর কাজে ফিরে আসতে পারে না। কিন্তু আমি তাদের মতো হতে চাইনি।

মারজিয়া ২০০৬ সালে এসএসসি পাস করেন কাপাসিয়া উপজেলার সূর্যবালা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে। উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হয়েই অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি পান। ২০০৯ সালে শরীফ মমতাজউদদীন আহমেদ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি আবেদন করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়। নিয়োগ পরীক্ষায় নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরি পান। যোগ দেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। ২০১২ সালে মারজিয়ার বিয়ে হয় একই গ্রামের মো. সাইফুল্লাহ লাবিবের সঙ্গে। তিনি নামিলা আনসারিয়া কামিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক।