রাবনাবাদের ভাঙনে বিপর্যস্ত তাঁরা

পটুয়াখালীর গলাচিপায় প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে গলাচিপার সদর ইউনিয়নের রাবনাবাদ নদের তীরে পক্ষিয়া গ্রামে।ছবি: প্রথম আলো

‘আগে মাইনসের বাড়িতে কাজ করতাম। বয়স বাড়ছে, কাজ করতে কষ্ট হয়। পরে ভিক্ষা করতাম। হাঁটাচলা করতে পারি না, তাই হেইয়াও বন্ধ। খুব কষ্টের মধ্যে আছি।’ বলছিলেন হতদরিদ্র লাল বানু (৬০)।

লাল বানুর বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের রাবনাবাদ নদের তীরে চর পক্ষিয়া গ্রামে। রাবনাবাদের ভাঙনে বিপর্যস্ত তিনি। লাল বানুর পরিবারসহ বন্যা ও নদের ভাঙনে বিপর্যস্ত ১০০ পরিবারের মধ্যে গতকাল বুধবার সকালে প্রথম আলো ট্রাস্ট্রের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে চর পক্ষিয়ার রাবনাবাদ নদের তীরে বাঁধের ঢালে। সেখানে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়।

ত্রাণের প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ ও আলু। ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করেন প্রথম আলোর পটুয়াখালী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, সদস্য ফারুক প্যাদা, ফারুক হাওলাদার, জাহিদ হাসান, মেহেদি হাসান প্রমুখ।

গতকাল ত্রাণ বিতরণের সময় কথা হয় লাল বানুর সঙ্গে। সে সময় তিনি জানালেন তাঁর দুঃখের কথা। জানালেন, দুই দফা ভাঙনে তাঁর বাড়িঘর নদে ভেসে গেছে। জমিজমা আগেই গেছে নদে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে বেড়িবাঁধের ঢালে। সেখানে ঝুপড়িঘরে থাকেন। ঝড় এলে ও পানি বাড়লে ছোট ঝুপড়িঘরটিও ভাঙনের কবলে পড়ে।

ত্রাণ পাওয়া লালছোন বিবি (৬৫) জানালেন, তাঁর স্বামী মোস্তফা মৃধা মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে নিয়ে জমিতে কৃষিকাজ করে চলছিল তাঁদের সংসার। কিন্তু রাবনাবাদ নদের ভাঙনে বসতঘর, কৃষিজমি—সব নদে বিলীন হয়ে যায়। আশ্রয় নেন বাঁধের ঢালে। করোনা ও জোয়ারে দুই মাস ধরে সন্তানেরা ঘরে বসে ছিলেন। সরকারের যে সাহায্য পেয়েছিলেন, তা–ও শেষ। ছেলেরা অন্যের ট্রলারে মাছ ধরার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এখন তাঁরা সাগরে। সাগর থেকে ফিরে এলে বাজার হবে। এর আগে এ ত্রাণ পেয়ে তাঁর খুবই উপকার হয়েছে।

চর পক্ষিয়া গ্রামের রাবনাবাদ নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে সোমর্ত বানু (৭০), রোকসানা বেগম (৫৫) ও চান মিয়া হাওলাদারের (৬৫) বাড়িও। তাঁরা জানান, প্রতিবছরই নদের স্রোতে তাঁদের বাড়ি ভাঙে। বাধ্য হয়ে থাকার ঘর একটু একটু করে সরাতে হয়। এ বছর নদের প্রবল স্রোতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। জোয়ারের পানির যে অবস্থা, তাতে অচিরেই ভিটেহারা হতে হবে তাঁদের।

গলাচিপা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাদী বলেন, প্রথম আলো এসব দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ উদ্যোগ দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।

তাঁর স্বামী মোস্তফা মৃধা মারা যাওয়ার পর তিন ছেলে নিয়ে জমিতে কৃষিকাজ করে চলছিল তাঁদের সংসার। কিন্তু রাবনাবাদ নদের ভাঙনে বসতঘর, কৃষিজমি—সব নদে বিলীন হয়ে যায়। আশ্রয় নেন বাঁধের ঢালে। করোনা ও জোয়ারে দুই মাস ধরে সন্তানেরা ঘরে বসে ছিলেন। সরকারের যে সাহায্য পেয়েছিলেন, তা–ও শেষ। ছেলেরা অন্যের ট্রলারে মাছ ধরার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এখন তাঁরা সাগরে। সাগর থেকে ফিরে এলে বাজার হবে। এর আগে এ ত্রাণ পেয়ে তাঁর খুবই উপকার হয়েছে।
লালছোন বিবি

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।