‘যে ডুডুয়া জার, কম্বল পায়া মোর খিব উপকার হইল’

নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়প্রথম আলো

৮০ বছরের মানো বালা এবার কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন। তাঁর গরম কাপড় নেই। বয়স্ক ভাতার সামান্য টাকায় কষ্টে চলে তাঁর দিন। তাঁকে দেখার মতো কেউ নেই। প্রথম আলো ট্রাস্টের কম্বল পেয়ে তিনি বলেন, ‘যে ডুডুয়া জার (তীব্র শীত), কম্বল পায়া মোর খিব উপকার হইল।’

নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে শীতার্তদের মধ্যে ২০০ কম্বল বিতরণ করা হয়। সেখানে কম্বল হাতে পেয়ে মানো বালা সন্তোষ প্রকাশ করেন। মানো বালার বাড়ি জেলা সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের সন্ন্যাসীর বাজার গ্রামে। বন্ধুসভার সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব কম্বল তুলে দেন শীতার্তদের হাতে।

এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা জেলা সদরের খোকশাবাড়ি, পলাশবাড়ি, টুপামারী, ইটাখোলা, কুন্দপুকুর, চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া–মহল্লা ঘুরে শীতার্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে একটি করে স্লিপ দিয়ে আসেন।

সকাল নয়টা থেকে নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হতে থাকেন শীতার্তরা। টুপামারী ইউনিয়নের বাজার মৌজা গ্রাম থেকে লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে এসেছেন শরৎ চন্দ্র রায় (৮৫)। কম্বল হাতে পেয়ে তিনি বলেন, ‘কম্বল খান পায়া মোক খিব ভালো নাগিল। ছোট বেটার পেকে খাও। ছোট বেটা ইশকা চলায়। অরে চলে না। মোক খাওয়াছে ওইটায় বেশি। কম্বল কিনি দিবে কোনঠে থাকি। জারত মোর খিব কষ্ট হইছে। তোমার ভালো হইবে।’

পলাশবাড়ি ইউনিয়নের ঢুলিয়া গ্রামের কাচুয়া বেওয়া (৭০) বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। হামার কিছুই নাই। এর আগত এখান কম্বল পাছু সেখান দিয়া জার পালায় না। এখান খিব গরম করেছে। মোর উপকার হইল।’

নিজের বলতে কেউ নেই চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের দক্ষিণ চওড়া গ্রামের বিনোদিনী রায়ের (৬৫)। বড় ছেলে মারা গেছেন প্রায় তিন বছর আগে। এখন ছেলের বউ তাঁকে দেখাশোনা করেন। বিনোদিনী রায় বলেন, ‘মোর কাহো নাই। বড় বেটা মারা গেইছে। বিদুয়া (বিধবা) বউর পাকত খাও। বউও মাইনসের বাড়িত কাম করি মোক খোয়ায়। বউটারও খিব কষ্ট হইছে। এই কম্বল খান পায়া হামার খিব উপকার হইল।’

কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নীলফামারী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রব্বানী, প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প রংপুর জোনের সহকারী প্রকৌশলী জুলফিকার আলী, উপদেষ্টা ও শিক্ষক সুধীর রায়, প্রথম আলো নীলফামারী প্রতিনিধি মীর মাহমুদুল হাসান, নীলফামারী বন্ধুসভার সভাপতি নিপুণ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান, সহসভাপতি প্রিয়াংকা রায়, সাবেক সভাপতি বিকাশ রায় প্রমুখ।

শীতার্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল হিসাব নম্বর ২০৭২০০১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।