যে কটা দিন বাঁচি, রোগীদের দোয়া নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই: ডা. গৌরব মজুমদার
ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত ডা. গৌরব মজুমদার। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি হন। সম্প্রতি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। ভাইভা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ করে ইন্টার্নশিপ করেন শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। ঠিক সেই সময়টাতে সারা বিশ্বে শুরু হয় মহামারি করোনা। করোনাকালে ডা. গৌরব মজুমদার নিজের অভিজ্ঞতার কথা লিখে জানালেন আমাদের কাছে। তাঁর লেখা এখানে তোলে ধরা হলো—বাংলাদেশে করোনা যখন কেবল আসতে শুরু করেছে, তখন আমার শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শুরু। ২০২০ সালের ২১ মার্চ কাজে যোগদান করি। তারপর করোনার ভয়াল থাবায় চলে গেছে অনেক প্রাণ। আমাদের ইন্টার্নদের মধ্যে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে করোনায়। ইন্টার্ন হোস্টেলে তারা রুমে কষ্ট করে হলেও কোয়ারেন্টাইন মেইনটেইন করে থাকার চেষ্টা করেছে। যথাযথ সুরক্ষাব্যবস্থা থাকলেও তাতে রেহাই পায়নি তারা। আমরা নিজেরাই ২টা করে মাস্ক কিনে পরেছি। ডিউটি চালিয়ে গেছি। ওই গরমে প্রতিদিন পিপিই পরে ডিউটি করার পর বাসায় এসে প্রতিদিনের কাপড় ধুয়েছি। তবু ভয়ে কেউ পিছিয়ে আসিনি।
করোনা ওয়ার্ডে হয়তো ডিউটি করতে হয়নি, কিন্তু জ্বর–শ্বাসকষ্ট নিয়ে বহু রোগী অ্যাজমার হাঁপানি বলে চলে এসেছে আমাদের কাছে। আমরাও কাছে গিয়ে ফুসফুস এক্সামিন করেছি। স্টেথোস্কোপ দিয়ে দেখি ফুসফুসে নিউমোনিয়ার মতো শব্দ। তারপরও রোগীর লোক বলেছে, আপনি যা ভাবছেন, তা না স্যার। সামান্য ঠান্ডা লাগছে হয়তো।
কত রোগীকে, রোগীর লোকদেরকে মাস্ক পরতে বলেছি, আবার খানিক বাদেই মাস্ক খুলে দিব্যি গল্প করতে শুরু করেছে ওই গাদাগাদি পরিবেশের ওয়ার্ডটাতে। নারী রোগী বা তাদের স্বজনদের মাস্ক পরতে বললেই ওড়না বা আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকা শুরু করত। আমরা ঠাট্টা করে বলতাম, ‘মাগো, আমরা আপনার ভাশুর না। করোনাও আপনার ভাশুর লাগে না। দয়া করে মাস্ক পরুন।’ এভাবেই অনেকটা যুদ্ধ করে এসেছি ইন্টার্নশিপের এই এক বছর। নিজে কতবার আক্রান্ত হয়েছি ঠিক নেই। সুস্থ একটি পৃথিবীর প্রার্থনা করছি প্রতিদিন।
গৌরব মজুমদার বলেন, ‘শত কষ্ট করে ডিউটি চালিয়ে যাওয়া পরও ক্লান্ত শরীরে কোথাও যেন একটা শান্তি থাকত। মনের ভেতরে একটা গর্ব হতো। মনে হতো, একদিন হয়তো মানুষ আমাদের এই সংগ্রাম কেমন ছিল, তা জানতেও চাইবে না। তবু এভাবেই প্রতিদিন যেন হাসপাতালের বারান্দা দিয়ে সুস্থ শরীরে হেঁটে ডিউটিতে যেতে পারি। যে কটা দিন বাঁচি, রোগীদের দোয়া নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’