‘যত সমস্যা আমাগো মতো গরিব মাইনষের’

মানিকগঞ্জে বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। গতকাল সদর উপজেলার নতুন বসতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।ছবি: প্রথম আলো

অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়ে এক যুগের বেশি সময় ধরে অনেকটাই শয্যাশায়ী দিনমজুর জালাল উদ্দিন (৫০)। চার সন্তানসহ ছয় সদস্যের পরিবারের দীনতায় সংসারের হাল ধরেন স্ত্রী রুবিয়া বেগম। ইটভাটায় কাজ করে যা মজুরি পান, তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা খাবার জোটানো কষ্টকর। এরই মধ্যে প্রায় তিন মাস ধরে বন্যার পানিতে ভাটা ডুবে থাকায় বেকার হয়ে গেছেন তিনিও। ধারদেনা ও অন্যের দেওয়া সাহায্য-সহযোগিতায় চলছে পরিবারটি।

গতকাল শনিবার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের তিন গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে রুবিয়ার পরিবারও।

ত্রাণসামগ্রী হাতে পেয়ে ছুটি ভাটাবাউর গ্রামের রুবিয়া বেগম (৪০) বলেন, ‘স্বামীডা পঙ্গু, বাড়িত শুয়ে থাকে। ইটভাটায় কাজ করি। হেইয়ানেও বন্যার পর থেইক্যা কাম বন্ধ। ছোট পোলাপান নিয়া খাইয়্যা না-খাইয়্যা থাকি। ঝড়-বৃষ্টি, বন্যায় যত সমস্যা আমাগো মতো গরিব মাইনষের।’

উপজেলা সদরের পাশেই দিঘী ইউনিয়ন। অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও এ ইউনিয়নের বেশির ভাগ স্থান থেকে বন্যার পানি এখনো নামেনি। এ কারণে পতিত রয়েছে অধিকাংশ ফসলি জমি। বেকার বসে আছেন অনেক কৃষক। গতকাল এই ইউনিয়নের ছুটি ভাটবাউর, দিঘী ও নতুন বসতি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবারকে নতুন বসতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণসহায়তা হিসেবে চাল, আলু ও লবণ দেওয়া হয়। ত্রাণ বিতরণকালে জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি দীপক কুমার ঘোষ, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তকিবুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ বন্ধুসভার সহসভাপতি শাম্মী জামান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল চন্দ্র দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ত্রাণ পেয়ে দিঘী মাঝিপাড়ার জেলে শনিরাম রাজবংশী (৫০) বলেন, ‘আগের মতো এহন আর মাছ পাওন যায় না। গ্রামের এক লোকের কাছ থাইক্যা কিস্তিতে ট্যাহা ঋণ নিছি। হেই ট্যাহায় আড়ত থাইক্যা মাছ কিনা বাজারে বেইচ্যা যা (আয়) পাই, তার বেশির ভাগই কিস্তি দিতে অয়। বাকি ট্যাহায় চারজনের সংসার চালাইতে কী যে সমস্যা! হেই জ্বালায় জ্বলছি।’

দিঘী গ্রামের রিকশাচালক তারা মিয়া (৬৫) অসুখ-বিসুখে ভুগছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে বাদল হোসেন বিয়ের পর পেতেছেন আলাদা সংসার। ত্রাণ নিতে আসেন তিনিও। বলেন, ‘কষ্ট অইলেও অ্যাতো দিন রিকশা চালাইছি। অসুস্থ শরীর নিয়া এহন তো আর রিকশার প্যাডেল ঘুরাইবার পারি না। পোলাডারও আলাদা সংসার। করোনা ও বন্যায় ওর সংসারই চলে না। এক বেলা আহার জুটলে আরেক বেলা না খাইয়্যা তাহি। তোমাগো তেরানে দুই বুইড়া-বুড়ি সপ্তাহখানিক খাইতে পারুম।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।