মাদক গ্রহণে দৈহিক ও মানসিক ক্ষতি হয়
মাদক গ্রহণের ফলে কী কী ধরনের ক্ষতি হয়, যারা মাদক গ্রহণ করেন তারা বুঝেন না। মাদক গ্রহণ করার ফলে দেহের ক্ষতি তো হচ্ছেই, মানসিক ক্ষতিও হয়। মাদক গ্রহনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যুবসমাজ কৌতূহলে অথবা বন্ধুদের চাপে মাদকাসক্ত হচ্ছেন। নারীদের মাদকের বিষয়টি আমরা লুকিয়ে রাখি অথবা সামনে আসে না।
মাদক গ্রহণের ফলে শারীরিক ও মানসিক দুটো ক্ষতি হয়। শারীরিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে লিভারের সমস্যা, হেপাটাইটিস, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জটিল রোগ, মানসিক রোগ ছাড়াও অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে যায়। যারা গ্রুপে মাদক গ্রহণ করেন তাদের সংক্রমণের হার বেড়ে যায় । গতকাল রোববার প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শ সভায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা.ফাতিমা মারিয়া খান এ কথা বলেন। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে আধা ঘণ্টা প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে মাদকবিরোধী অনলাইন পরামর্শ সহায়তা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়কারী মাহবুবা সুলতানা। অনলাইনে মাদকবিরোধী পরামর্শ সহায়তা সভার এটি ছিল ১৮তম আয়োজন।
ডা. ফাতিমা মারিয়া খান আরও বলেন, কেউ কেউ যৌনশক্তি বাড়াতে মাদক গ্রহণ করেন। তাৎক্ষণিক কাজ হলেও স্থায়ীভাবে যৌনশক্তি ধ্বংস করে দেয় মাদক। মাদক গ্রহণ করলে মানসিক সমস্যা যেমন ডিপ্রেশন, অস্থিরতা দেখা যায় । মাদক গ্রহণের ফলে পুরুষেরা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন এবং নারীরাও অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
জনৈক প্রশ্নকর্তা জানতে চেয়েছেন তার এক ভাই মাদকাসক্ত । কী করবেন । উত্তরে মারিয়া খান বলেছেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে। জানতে হবে মাদকাসক্তের কোন অবস্থায় আছেন। শুরুতে সনাক্ত করতে পারলে সহজে সুপথে আনা যাবে। মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে মোটিভেশন দরকার।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি কমপক্ষে দুই বছর যদি মাদক গ্রহণ না করেন, তবে ধরে নেওয়া যায় তিনি মাদক মুক্ত হয়েছেন। তাদেরকে ৫টি ট্রিগারিং ফ্যাকটর থেকে দুরে থাকতে হবে। তা হলো: ১. মাদক গ্রহনের আগে যেই মোবাইল ব্যবহার করত সেই সিম বদলাতে হবে। ২. যেই স্থানগুলোতে সে মাদক গ্রহণ করত সেইস্থান এড়িয়ে চলা ৩. মাদক ছাড়ার পর কোন বন্ধুর সঙ্গে মিশছেন তা দেখতে হবে। ৪. টাকাপয়সা খরচের ক্ষেত্রে সতকর্তা ৫. যেই সময়গুলোতে সে মাদক গ্রহণ করত সেই সময়ে অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার পরামর্শ দেন তিনি ।
প্রিয়জন মাদক গ্রহণ করলে পরিবারের লোকজন বুঝেনা তাদের কোথায় নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে মারিয়া খান বলেন, সরকারি ভাবে নামমাত্র মূল্যে মাদকাসক্তদের সেবা পাওয়া যায়। রাজধানীর শ্যামলীতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ,ঢাকার তেজগাঁও কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগ, এছাড়াও সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে মনোরোগ বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন।
একজন প্রশ্ন করেছেন সিগারেট ছাড়তে চান। ধুমপান বা সিগারেট ছাড়তে হলে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগোতে হবে। তার অবস্থা বুঝে ছাড়তে হবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
আরেকজন জানতে চেয়েছেন গাঁজা খেলে কি ক্ষতি হয়। গাঁজা খেলে ক্ষণিকের জন্য ভালো লাগে। ক্ষনিকের ভালোলাগা যেন কাল (ক্ষতির কারণ) হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মাদকাসক্তকে না বলা শিখতে হবে। কোন সমস্যা হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে শেয়ার করবেন। যে মাদক গ্রহণ করতে বলে সে প্রকৃত বন্ধু নয় । মাদক থেকে দূরে থাকুন।