‘মছিবত হামাগের পিছন ছাড়িচ্ছে না’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে বানভাসি ১০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গত রোববার নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মান্দার পলাশবাড়ী এলাকায়।ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর আত্রাই নদের তীরের মানুষের কাছে বন্যা নতুন কিছু নয়। নদের পানি বাড়লেই ভাঙে বাঁধ। তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে রোজগারহীন মানুষ দুই দফা বন্যায় আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। বন্যায় অনেকেই ঘর হারিয়েছেন। কাজও নেই। খেতের ফসলও ডুবেছে। সব মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা।

এ রকম পরিস্থিতিতে গত রোববার নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়। সেই ত্রাণ নিতে এসে কর্ণভাগ গ্রামের অজিত কুমার (৪৮) বলেন, ‘হামাগের কপালটাই খারাপ। আষাঢ় মাসে বাঁধ ভ্যাঙ্গে সবজি ও পাটের আবাদ নষ্ট হলো। বানের পানি ন্যামে যাওয়ার পর খ্যাতে আমান ধানের চারা লাগাইলাম। সেইডাও গ্যালো। ঘরবাড়িত পানি। এ বছর মছিবত হামাগের পিছন ছাড়িচ্ছে না। একটার পর একটা বিপদে ব্যাঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে গ্যাছে। বউ-ছাউলের মুখত তিনবেলা খাবার দিতে পারিচ্ছি না। যেটুকু সঞ্চয় ছিল, অনেক আগেই তা শ্যাষ হয়ে গ্যাছে। ধারকর্জ করে আর ইলিফ লিয়ে কোনোমতো চলিচ্ছি।’

মান্দার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের আত্রাইয়ের তীরবর্তী বটতলী, কর্ণভাগ, শহরবাড়ী, কয়লাবাড়ী ও চকরামপুর গ্রামের ১০০টি বানভাসি পরিবারকে রোববার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়। ত্রাণ হিসেবে ছিল চাল, ডাল, আলু, তেল, লবণ ও মুড়ি। আত্রাই নদের তীরে বটতলী ও পলাশবাড়ী এলাকায় ওই ত্রাণ বিতরণ করেন নওগাঁর প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ বন্ধুসভার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহসভাপতি লিনা আলী ও বিষ্ণু কুমার, সাধারণ সম্পাদক ফারহান শাহরিয়ার প্রমুখ। এর আগে বন্ধুসভার সদস্যরা বন্যাদুর্গত এলাকা ঘুরে সংকটে থাকা পরিবারের তালিকা তৈরি করেন।

শহরবাড়ী গ্রামের হাফিজুর রহমান ত্রাণ পেয়ে বলেন, ‘কোথাও কুনো কাম নাই। খ্যাতের আবাদ সব বানের পানিত ডুবে নষ্ট হয়ে গ্যাছে। খামু কী, চলমু ক্যামনে জানি না। দুর্যোগের মধ্যে ছলপল লিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

নওগাঁয় প্রথম দফায় জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে আত্রাই নদের পানি বেড়ে যায়।
২০-২৫ দিন ধরে ওই বন্যা স্থায়ী ছিল। এতে মান্দা ও আত্রাই উপজেলার পাঁচটি জায়গায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। কাঁচা ঘরবাড়িগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ছাড়া মাঠে থাকা পাটসহ বিভিন্ন রকম সবজির খেত তলিয়ে যায়। ভাঙা বাঁধ সংস্কার না করায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবারও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।