ভাসছে উপকূল, কাঁদছে মানুষ
পরিবারের সবার জন্য দুপুরের খাবার রান্না করছিলেন বাগেরহাটের মাঝিডাঙ্গার লতা বেগম।কিন্তু রান্না শেষ করে আর খেয়ে ওঠা হয়নি তাঁর পরিবারের। জ্বলন্ত চুলা ডুবে যায় পানিতে। জোয়ারের পানি ঢুকে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। খোপের হাঁস মুরগি পানিতে আটকে মারা যায়। সাপ, বিছা, বিষাক্ত পোকামাকড়ের সাথে একই ঘরে থাকছে ঘরের শিশুসহ বাকি সদস্যরা। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আসছে তা প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা আগেভাগেই জেনে গিয়েছিলাম। রেডিও, টেলিভিশন পত্রিকাগুলো তাদের সংবাদে বারবার করে ইয়াসের গতিবেগ,আঘাত করবার সম্ভাব্য দিনক্ষণ আমাদের জানিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানবেনা, এটা ছিলো আমাদের জন্য খানিকটা স্বস্তির সংবাদ। ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত করেনি, করেছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ওডিশায়। কিন্তু পাশের দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাণ্ডবের যতটুকু প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে, তাতে আমরা বিধ্বস্ত, আশ্রয়হীন, আতঙ্কিত। শুধু বরিশাল বিভাগেই প্রায় ১০০ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
দুর্যোগ দুর্ভোগের এই দেশে এর আগেও সিডর, আইলা, আম্পানে উপকূলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ক্ষতবিক্ষত হলেছে। তবে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল বেশ খানিকটা অক্ষতই ছিল। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাঁধ, সড়ক -জনবসতি বিধ্বস্ত আশ্রয়হীন হয়েছে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূল। জোয়ার, জলোচ্ছ্বাসে ভোলায় ৮৫ হাজার পরিবার প্লাবিত হয়েছে।
করোনা, আসন্ন বাজেট, সারা বিশ্বের নানা খবরের ভিড়ে উপকূলের মানুষের খবর কার কতটা নজর কেড়েছে জানিনা। তবে সত্যি হল, পানিবন্দি মানুষগুলো কষ্টে আছে, বিপদগ্রস্ত আছে, আশ্রয়হীন আছে, ফের প্লাবিত হবার আতঙ্কে আছে। আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। যে কয়দিন সম্ভব পানিবন্দি এই মানুষগুলোর কাছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে চাই। সে লক্ষ্যে আগামীকাল ৩ জুন থেকে ইয়াসে দূর্গত মানুষের কাছে খাবার নিয়ে বন্ধুসভার বন্ধুদের সহায়তায় পৌঁছে যাবে প্রথম আলো ট্রাস্ট।
প্রথমদিন থেকেই ভোলা, বাগেরহাটের বন্ধুরা বাঁধ রক্ষার কাজে সকলের হাতে হাত রেখে কাজ করে যাচ্ছে। এবার তাঁরা প্রথম আলো ট্রাস্টের সহায়তা নিয়ে মানুষের দ্বারে গিয়ে দাঁড়াবে। শত শত মানুষের পাশে দাঁড়াবার এই সাহস আমাদের জুগিয়েছেন আপনারা। প্রতিটি দুর্ভোগে-দুর্যোগে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি, কারণ আপনারা আমাদের পাশে থাকেন। সবই সম্ভব হয় আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদানের জন্য। আপনাদের সমর্থন আমাদের সাহস দেয়। প্রথম আলো ট্রাস্ট চায় দেশের মানুষের মুখের অমলিন হাসিটা ধরে রাখতে।
প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ কার্যক্রমে আপনিও অংশগ্রহণ করতে পারেন। আপনার সহায়তা আমরা পৌঁছে দেব অসহায় মানুষের কাছে। সহযোগিতা করতে চাইলে নিম্নোক্ত ব্যাংক হিসাবে আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।
ব্যাংক হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর : ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
লেখক: সমন্বয়ক, প্রথম আলো ট্রাস্ট