ভালো আছি, সুখে আছি
আসমার অ্যাসিডে দগ্ধ মুখ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। পড়াশোনাও থেমে ছিল না। সংসার হয়েছে। সন্তান আছে। কর্মজীবনেও সফল। আসমা আক্তার। বাড়ি কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা অষ্টগ্রামের কলমা ইউনিয়নের ডালারকান্দি গ্রামে। আসমা চাকরি করেন অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে। পরিবারকল্যাণ সহকারী পদে চাকরি হয় ২০১২ সালে। নিজের কাজের মাধ্যমে আসমা ডালারকান্দি, শিবলা, শরীফপুর গ্রামবাসীর কাছে সুপরিচিত, সবার আপনজন। প্রতিদিন কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের উপকরণ নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন আসমা। বর্ষায় নৌকায় আর গ্রীষ্মে হেঁটে হেঁটে নারী-পুরুষদের সচেতন করে বাড়ি ফেরেন সন্ধ্যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে ‘ডাক্তার আপা’ বলেই ডাকেন।
আসমা আক্তার বলেন, ‘ভাবিনি অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের তালিকায় আমারও নাম থাকবে। আবার এটিও ভাবিনি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব। গ্রামের সব বয়সের মানুষ যখন ডাক্তার আপা ডাকে তখন আনন্দে চোখে পানি এসে যায়।’
১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসের ১৭তম দিনটির কথা মনে হলে এখনো আঁতকে ওঠেন আসমা। প্রথমে প্রেমের, পরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সেদিন প্রতিবেশী আসাদুল্লাহ মিয়া নামে এক বখাটের ছুড়ে মারা অ্যাসিডে আসমার মুখ ঝলসে যায়। তখন আসমা স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। দীর্ঘ চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মুখের কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে পান তিনি। আসমার আকস্মিক এই ধূসর জীবনে বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ায় ‘অ্যাসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিল । তহবিলের অর্থে চিকিৎসা ও পড়াশোনা চলে সমানভাবে।
২০০৫ সালে চাচাতো ভাই জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। আসমা-জয়নাল দম্পতির তিন সন্তান। মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বিদ্যালয়ে পড়ছে। আরেক মেয়ে লামিয়া, ছেলে সিয়াম । আসমা বলেন, ‘সেই দিন প্রথম আলো পাশে না থাকলে আজ হয়তো এমন জীবনের দেখা পেতাম না। নিয়মিত বৃত্তি পেতাম বলে মনে বল পেয়েছিলাম। এই বল পাওয়ার কারণেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। আর পড়াশোনা করতে পেরেছি বলে আজ চাকরি পেয়ে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পেরেছি। আইনি সফলতাও এসেছে।’
আসমা বলেন, ‘আমি ভালো আছি। সুখে আছি।’