শহীদুল্লাহএখন স্বাবলম্বী

অদম্য মেধাবী মো. শহীদুল্লাহ হাবীব শোনালেন তাঁর জীবনের গল্প। ছোট থেকে নানা প্রতিকূলতা দেখেছেন তিনি। সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। তাঁর জীবনের নানা গল্প উঠে আসে ৮ এপ্রিল ২০২১ প্রথম আলো ট্রাস্টের নিয়মিত আয়োজন ‘অদম্য মেধাবীর সঙ্গে’ অনলাইন অনুষ্ঠানে। তিনি ‘ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

অদম্য মেধাবী মো. শহীদুল্লাহ হাবীব ওয়াল্টন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ইনভেন্টরি বিভাগে অফিসার-১ হিসেবে কর্মরত।

বেড়ে ওঠার গল্পটা মো.শহীদুল্লাহ হাবীব বলেন, আমরা পাঁচ ভাই-বোন। আমাদের পরিবারের অবস্থা খুব খারাপ ছিল্। বাবা একমাত্র উপার্জন করতেন। আমি ক্লাস থ্রি পর্যন্ত সাধারণ ছাত্র ছিলাম। বাবা বললেন, পড়াশোনা করে কী হবে? আমাকে বাদাম কিনে দিলেন। সারাদিন বাদাম বিক্রি করতাম । যা টাকা পেতাম, তাই বাবার হাতে দিতাম। তারপর ভাবলাম একদিন আগেও স্কুলের ছাত্র ছিলাম আজ বাদাম বিক্রি করছি। স্কুলের এক স্যার সহায়তা করলেন, আবার স্কুলে ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হলাম । রোল নাম্বার ছিল ৬০। পরীক্ষা দিলাম রোল হলো ৪।

২০০৮ সালে পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পাই ।আদমদীঘিতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি নিয়ে পড়লাম। বাবা চাতালে সারারাত (ধান ভাঙানো, চাল তৈরির) কাজ করতেন। বাবার সাথে চাতালে কাজ করতাম। দিনের বেলা স্কুলে যেতাম। বিকেলে খেলতাম। দিনের কোন এক সময় ঘুমাতাম। আমার সহপাঠী বা বন্ধূ কেউ বুঝতেই পারতনা যে আমি সারারাত চাতালে কাজ করতাম। সে সময় মা অসুস্থ হলো। আমাদের নিজস্ব কোনো বাড়ি ঘর নাই। তাই চাতালের পাশে থাকার ব্যবস্থা ছিল। রাস্তার বারান্দায় কাঁথা-বালিশ নিয়ে ঘুমাতাম । রাস্তার লাইটের আলোতে পড়াশোনা করতাম। ভোরবেলা রাস্তা থেকে চলে আসতাম। আবার বস্তা সেলাইয়ের কাজ ও করেছি। বগুড়া জেলার আদমদীঘিতে আমার বাড়ি। ২০১৪সালে এস.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেলাম। ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হব। বাবার বয়স ৬০ বছর। চিন্তা করলাম শর্টকাট পদ্ধতি কি আছে । পলিটেকনিকে ভর্তি হলাম। প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া বৃত্তির টাকায় পড়াশোনা করতাম আর টিউশনির টাকা বাড়িতে পাঠাতাম।

২০১৮ সালে পাশ করি। প্রাণ-আরএফএল এ যোগ দেই । ৬ মাস চাকরি করলাম। তারপর ওয়ালটনে দুই বছর ধরে কাজ করছি । আমার মা এখন সুস্থ। বাবা মাকে টাকা পাঠাই, ভালো আছেন তারা । সবকিছুই সম্ভব হয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্টের জন্য।

শহীদুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার স্বপ্ন কী? তিনি বললেন, উদ্যোক্তা হতে চাই। এতদিন ছোট স্বপ্ন দেখেছি, এখন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছি, যেন ভবিষ্যতে আমার মতো এমন অদম্য মেধাবী দশজনকে যেন পড়াতে পারি।

সকল অদম্য মেধাবীদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কি না জানতে চাইলে মো.শহীদুল্লাহ হাবীব বলেন, অদম্য মেধাবীদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে বললেন, কখনোই মনোবল হারাবেন না । সাহস হারাবেন না। অর্থের জন্য কিছু থেমে থাকে না। একটাই পরামর্শ পড়াশোনা, পড়াশোনা আর পড়াশোনা ।

অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।