ব্রহ্মপুত্রের পেটে কষ্টের জীবন

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শেরপুরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের সাতপাকিয়া কাঁচাবাজার মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুর সদর উপজেলার একেবারে শেষ প্রান্তে কুলুরচর ব্যাপারীপাড়া গ্রামটির অবস্থান। বলা যায়, একেবারে ব্রহ্মপুত্র নদের পেটের মধ্যে। গ্রামটির উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকেই নদ। অনেকটা দ্বীপের মতো। এ গ্রামে প্রায় ৭০০ পরিবারের বাস। বাসিন্দাদের বেশির ভাগই দিনমজুরি, খুদে ব্যবসা, চা বিক্রি, গাভি পালন বা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবারের করোনাকালে তাঁদের রোজগার একেবারেই কমে যায়। এর মধ্যেই দুই দফায় প্রায় এক মাস পানিবন্দী থাকায় এখন খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ব্যাপারীপাড়া ও সাতপাকিয়া গ্রামের ১০০ বানভাসির মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ নিতে আসা ব্যাপারীপাড়া গ্রামের পাঞ্জাতুন বেওয়া (৭০) বলেন, ‘ঘরে বন্যার পানি উঠছিল, ১৫-১৬ দিন পানি আছিল। পানির কারণে ঘরডাও ভাইঙ্গা পড়তাছে। স্বামী নাই, দুই পোলা গতর খাইট্টা সংসার চালায়। পানি ওঠার পর হ্যাগোর কোনো কাইজ-কামও বন্ধ আছিল। অহন পানি কমছে। কিন্তু পোলাগো কাম নাই। অনেক কষ্ট কইরা খায়া না–খায়া দিন কাটাইতাছি।’

প্রথম আলো বন্ধুসভা শেরপুর জেলা শাখার সদস্যরা ব্রহ্মপুত্র সেতুসংলগ্ন সাতপাকিয়া কাঁচাবাজার মাঠে গতকাল সকালে এসব ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন চরপক্ষীমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকবর আলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ইউপি সদস্য মো. জাফর, শেরপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা মলয় চাকী প্রমুখ। পরিবারগুলোকে দেওয়া ত্রাণের ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, আলু, লবণ ও সয়াবিন তেল।

এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, প্রথম আলো ত্রাণ নিয়ে ব্রহ্মপুত্রপারের বানভাসি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এটি খুবই প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতেও এ কাজ অব্যাহত থাকবে এবং অন্যরাও এ ধরনের কাজে যুক্ত হবেন বলে আশা করেন তিনি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ঘরে বন্যার পানি ওঠায় প্রায় দেড় শ পরিবার ওই গ্রামের কুলুরচর ব্যাপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ব্রহ্মপুত্র নদসংলগ্ন জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেয়।

ত্রাণ নিতে আসা দিনমজুর হাবিবুর রহমান (৬২) বলেন, ‘প্রত্যেক বছর নদী আমগর ঘরবাড়ি ভাইঙ্গ্যা নিয়া যায়। এইবার ভাঙ্গনও ছিল, পানিও উঠছে। ঘরবাড়ি তলাইয়া গেছিল। ওই সময় স্কুলের মাঠে পরিবার নিয়া আশ্রয় নিছিলাম। খুব কষ্টে দিন কাটাইছি। তেমন কাজ-কাম নাই। অহনও কষ্ট করতাছি।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।