নওগাঁর মান্দার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামের জহির উদ্দিনকে (৫৫) সচ্ছল গৃহস্থের কাতারেই ফেলা যেত দেড় মাস আগেও। কয়েক বিঘা খেতের ফসল, পুকুরের মাছ—সবই ছিল তাঁর। করোনাকালেও পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে চলতে তেমন কষ্ট হচ্ছিল না। কিন্তু হঠাৎ আত্রাইয়ের বাঁধভাঙা বন্যার পানিতে সব শেষ হয়ে গেল। ফসলের খেত ডুবে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসেছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে বসবাসের একমাত্র আশ্রয়স্থল মাটির বসতঘরটিও ধসে পড়েছে বানের পানির তোড়ে। এখন তাঁকেই মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।
গত শুক্রবার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের ১০০ বানভাসি পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণের ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, আলু, তেল ও লবণ। প্রথম আলো নওগাঁ বন্ধুসভার সদস্যরা চকরামপুর দক্ষিণপাড়া বাঁধসংলগ্ন মাঠে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে এসব ত্রাণ পৌঁছে দেন। ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষক আয়নাল হক, নওগাঁর প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফারহান শাহরিয়ার প্রমুখ।
শুক্রবার খাদ্যসামগ্রী পেয়ে জহির উদ্দিন বলেন, ‘খ্যাতে ধান, পাট ও সবজির আবাদ ছিল। বন্যার পানিত খ্যাতের ফসল তলে গিয়ে নষ্ট হয়্যা গ্যাছে। পুকুরের মাছ ভ্যাসে গ্যাছে। বসতঘরটাও ধস্যা গেছে। এখন বাঁশ, তালগাছের পাতা দিয়্যা কোনোরকম বেড়া বানায় বউ-ছল লিয়া আছি। সবচেয়ে বড় কষ্ট খাবারের। ধার-দেনা কর্যা কতো দিন চলা যায়।’
গত ১৫ জুলাই আত্রাই নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পুরো বিষ্ণুপুর ইউনিয়নটি প্লাবিত হয়। এখন বেশির ভাগ ঘরবাড়ি, সড়ক থেকে পানি নামলেও ফসলের খেত ও নিচু এলাকায় এখনো পানি রয়ে গেছে। রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখনো বেশির ভাগ মানুষ নৌকায় চলাচল করছে।
দাসপাড়া গ্রামের অশীতিপর ছামিরণ বেওয়া বলেন, ‘একবার শুধু মেম্বারে ছয়-সাত দিনের খাওয়ার তিরান দিছে। এখন মানুষের বাড়িত চ্যাইয়া কোনোরকম এক বেলা খ্যাইয়া বাঁচ্যা আছিগো।’
চকরামপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের জুলেখা খাতুন বলেন, ‘কামাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব কষ্টে দিন কাটিচ্ছে। ছাওয়াল-পল লিয়ে এক বেলা খ্যালে আরেক বেলা না খ্যাইয়া থাকি। এই তিরান প্যায়া খুব উপকার হলো।’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম : প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর : ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।