জুনের শেষ থেকে পদ্মার পানি হু হু করে বাড়তে থাকে আর তলিয়ে যেতে থাকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দী হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পরিবার। একদিকে করোনার কারণে উপার্জন নেই, আরেক দিকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে মানুষ। তিন দফায় বন্যার পানিতে ফসল ও সবজিখেতের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যও হারিয়েছে অনেক কৃষিজীবী পরিবার।
গোয়ালন্দ পৌরসভার হানিরডাঙ্গী এলাকার মৃত সাহজদ্দিনের স্ত্রী ময়না বুরু স্বামীর ২ শতাংশ জমির ওপর খুপরিঘরে কোনোরকমে বাস করেন। তিন বেলা খাবারই জোটাতে পারছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা তাঁর ঘরে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এক প্যাকেট ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পর তিনি কেঁদে ফেলেন। বলেন, ‘সোয়ামী মইরা গেছে অনেক আগেই। ছাওয়াল, মেয়াগোর আলাদা সংসার, যে যার মতো থাহে। দুই মাস ধইরা বাইস্যার পানি আসার পর একবার তেরান পাইছিলাম। আর বাড়িতে দুইডা বখরি (ছাগল) পালি। তাই বেইচা এদ্দিন চলছি।’
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, ছোটভাকলা ইউনিয়ন ও গোয়ালন্দ পৌরসভার বন্যাদুর্গত ১০০টি অসহায় পরিবারের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়। প্রথম আলো গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সদস্যরা এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। ত্রাণ কার্যক্রমে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম, গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সভাপতি মুহাম্মদ বাবর আলী, সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান প্রমুখ অংশ নেন।
দেবগ্রামের কাওয়ালজানি মরা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত বাঁধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এখানে ত্রাণ নিতে আসা তেনাপচা গ্রামের ফিরোজা বেগম (৫০) বলেন, ‘বাপ রে আমার কোন বেটা (ছেলে) নাই। মাইয়াডারে নিয়া কোনো রহম চলতাছি। খাওনই জুটে না। আপনাগের তেরান দিয়া এই সপ্তাডা চলব। এরপর যে কী অইব।’
করোনাকালে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ দেওয়া হয়। তবে এখন যে অবস্থা তাতে প্রথম আলোর মতো সবারই বানভাসি মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো খুব জরুরিদেবগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম
দেবগ্রামের দুর্গম অঞ্চলের মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রথম আলো ও বন্ধুসভাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেবগ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকালে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ দেওয়া হয়। তবে এখন যে অবস্থা তাতে প্রথম আলোর মতো সবারই বানভাসি মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো খুব জরুরি।’