পাঁচ দফা বন্যার পর নদীভাঙনে দিশেহারা মানুষ

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের বড়বাড়ী গ্রামের ১০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন মানুষেরা। ২১ অক্টোবর দুপুরেছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দুধকুমার নদের তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে দুধকুমারের তাণ্ডবে বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে নদের পারের শত পরিবার। বসতভিটা হারিয়ে অনেকে অন্যের জমি ও সড়কের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।

২১ অক্টোবর প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দুধকুমার নদের তীরবর্তী চর দামাল গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ১০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

চরের রোকেয়া বেগমের জীবন যেন আর চলছে না। তিনি বলেন, ‘পাঁচবার বানের পর নদীভাঙন। হামার কী অবস্থা দাঁড়াছে। কাইও ঘরবাড়ি ঠিক করি দেয় না। জাগা দেয় না। সোমানে ভাঙবার নাগছে।’

ত্রাণ হিসেবে দেওয়া ব্যাগে ছিল চাল, তেল, ডাল, লবণ ও পেঁয়াজ। কুড়িগ্রাম প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা এগুলো বিতরণ করেন। ত্রাণের ব্যাগটা হাতে পেয়ে জহুরা বেগমের মুখে সামান্য হাসি ফোটে। তিনি বলেন, ‘খুব কষ্টে পড়ছি বা। সবাই হামরা নদীভাঙা মানুষ। খাবার জোগাড় করি, না ঘর ঠিক করি!’

পায়ে ব্যথা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ত্রাণ নিতে আসেন চরের বাসিন্দা বৃদ্ধ সোনাভান বিবি। তিনি বলেন, ‘অ্যালা বয়স হইছে, চলবার পাই না। মানষের কাছে হাত পাতি চলি।’

যেখানে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছিল এলাকাটি দুধকুমার নদের পাড়েই। নদের পাশেই বিদ্যালয় ও একটি পাকা মসজিদ। ত্রাণ দেওয়ার সময় চোখে পড়ে পাড় ভেঙে বিশাল বিশাল মাটির চাঁই নদে পড়ছে। মসজিদের এক অংশ ভেঙে যায়। স্থানীয় মানুষ বাকি অংশ ভেঙে ফেলেন। অনেকে বাড়িঘর, আসবাবপত্র সরাতে ব্যস্ত। কেউ এর মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে। একেবারে বিধ্বস্ত অবস্থা। ঘরের চালা, বেড়া খুলে সড়কের ওপর রেখেছেন অনেকেই।

দুধকুমারের ভাঙনে তছনছ পুরো গ্রাম। ত্রাণ পেয়ে গ্রামের কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ঘরের চালা সড়কোত ফ্যালে থুছি। দিনমজুরি করি, জাগাজমি নাই, কোটে যাই। এগলা (ত্রাণ) দিয়া কয়েক দিন চলবে।’

গ্রামের সুমন মিয়া জানান, কয়েক দিন আগে দুটি বৈদ্যুতিক খুঁটি নদে ভেঙে পড়ায় ৭৫টি পরিবার বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়। এ ছাড়া স্রোতের তোড়ে হাজীর মোড় থেকে মাঝিটারী পর্যন্ত বাঁধটি ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরবর্তী সময়ে বাঁধ ঠিক না হলে সামান্য বন্যাতেই সব তলিয়ে যাবে।