‘কাম না থাকলে পেট চালাইমু ক্যামনে’

শরীয়তপুরের বন্যার্তদের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। গতকাল জাজিরার পদ্মার চর পাইনপারা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

চারদিক দিয়ে পদ্মা নদী, মাঝে তিনটি গ্রাম মাঝিকান্দি, আহমেদ মাঝিকান্দি ও পাইনপাড়া। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের ওই গ্রামগুলোর প্রায় সব মানুষই কৃষিজীবী। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পদ্মায় পানি বেড়ে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে গ্রাম তিনটি। রাস্তা-খেত-ঘরবাড়ি সব ডুবে যায়। নষ্ট হয়ে যায় বিস্তীর্ণ খেতের ফসল। করোনাকালে কর্মহীনতায় দুই মাস ওই গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। এলাকায় কাজ নেই, শহরে গিয়েও লাভ হচ্ছে না। শ্রমজীবী মানুষগুলোর ঘরে ঘরে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে গতকাল বুধবার জাজিরার পাইনপারা এলাকায় ১০০টি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়। প্রথম আলোর শরীয়তপুর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, আবদুল মোতালেব, জাহিদ হাসান, পপি আক্তার প্রমুখ ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন। ত্রাণের প্রতি ব্যাগে ছিল চাল, ডাল, তেল, লবণ ও আলু।

ওই চরের পাইনপারার বাসিন্দা কৃষিশ্রমিক মালেক ব্যাপারীর বসতঘর ও ফসল বন্যায় নষ্ট হয়েছে। দুই মাসে আর কোথাও কাজ জুটাতে পারেননি তিনি। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে জানিয়ে মালেক ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুবই কষ্ট কইরা, যুদ্দ কইরা জীবনডারে টানতাছি। করোনার টাইমে বন্যায় এক্কেরে বেকার বইয়া আছি। কাম না থাকলে পেট চালাইমু ক্যামনে? দুইবার সরকারের লোকেরা আইসা চাইল-ডাইল দিয়া গ্যাছে। এহন আপনেরা দিলেন। এমন কইরা আর কয় দিন চলে কন।’

বন্যায় শরীয়তপুরের ৪০০ গ্রামের সাড়ে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় বন্যাকবলিত মানুষদের খাদ্যসহায়তা হিসেবে ৯৫০ মেট্রিক টন চাল, ৪ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ১ হাজার ১০০ প্যাকেট শিশুখাদ্য ও ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন যে ভয়াবহ অবস্থা, তাতে এই ত্রাণ খুবই অপ্রতুল।

মাঝিকান্দি গ্রামের মমতাজ বেগমের পরিবারের ছয় সদস্য। স্বামী টুকু ব্যাপারী কৃষিশ্রমিক। করোনা ও বন্যা মিলিয়ে প্রায় চার মাস ধরে বেকার টুকু ব্যাপারী। বন্যায় ঘর তো ডুবেছেই, মমতাজের গৃহপালিত হাস-মুরগিগুলোই ভেসে গেছে। অসহায় পরিবারটি দুই দফা সরকারি সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি চাল পেয়েছিল। গতকাল প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ নিতে এসে মমতাজ বেগম প্রথম বলেন, ‘সারা জীবনই তো গরিব থাকলাম। তয় এইবারের মতো জীবনে আর এত কষ্ট করিনি। করোনায় কাম নাই। এর মধ্যেই পানিতে ভাসতাছি দুই মাস ধইরা। সংসারে কোনো কামাই নাই। এক্কেরে না খাইয়া থাকার দশা। মাইনষের ধারে হাত পাইত্তা চলতাছি।’

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।

হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল

হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।