কষ্টের জীবনে শিক্ষার আনন্দ

প্রশান্ত রায়, টুম্পা রানী সরকার, মো. হাসান মোল্লা, স্মৃতিমনি, কামরুল হাসান
প্রশান্ত রায়, টুম্পা রানী সরকার, মো. হাসান মোল্লা, স্মৃতিমনি, কামরুল হাসান

তাঁদের বেশভূষা মলিন। এক বেলা খাবার জোটে তো আরেক বেলা জোটে না। শরীর জীর্ণ হলেও চোখেমুখে তাঁদের দৃঢ় প্রত্যয়। সংকল্প, পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর মনের জোরে তাঁরা প্রতিকূলতা দূরে ঠেলেছেন। এসএসসি পরীক্ষায় তাঁরা জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। দুই বছর পর এইচএসসিতে আবারও জিপিএ-৫ পেয়েছেন স্মৃতিমণি, কামরুল হাসান, প্রশান্ত রায়, টুম্পা রানী সরকার ও হাসান মোল্লা। শুধু এই পাঁচজন নন, ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে বৃত্তি পাওয়া ৫০ শিক্ষার্থীর অনেকেই এবার এইচএসসি পরীক্ষায় আবারও জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
প্রতিনিয়ত জীবনের নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করা এসব শিক্ষার্থীকে তাই ‘অদম্য মেধাবী’ অভিধায় সম্মান জানিয়ে আসছে প্রথম আলো।
২০১২ সালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া ৫০ জন অদম্য মেধাবীকে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় শিক্ষাবৃত্তি। 
ওই ৫০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো অদম্য মেধাবী তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হতো। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই প্রতি মাসে এসব শিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হতো শিক্ষাবৃত্তির টাকা। পড়ার খরচ জোগাতে টানা ২৪ মাস এই আর্থিক সুবিধা তাঁরা পেয়ে আসছিলেন। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্যও তাঁদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। 
এসএসসির পর এইচএসসিতেও অদম্য মেধাবীদের ভালো ফল প্রসঙ্গে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড সার্ভিস কোয়ালিটি জীশান কিংশুক হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এই ছেলেমেয়েরা যে আবারও সাফল্যে পেল, এটি অসম্ভব আনন্দের খবর। এমন অর্জন আবারও আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সত্যিকারের মেধাকে আর্থিক অসচ্ছলতা দমিয়ে রাখতে পারে না। যেসব শিক্ষার্থী এসএসসির পর এবার এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে, তাদের উচ্চশিক্ষায় পাশে থাকবে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট।’
জীশান কিংশুক হক বলেন, ‘অদম্য মেধাবীদের এমন ভালো ফল তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমাদের আস্থা আরও বাড়িয়ে দেয়। আমরা অনুপ্রাণিত বোধ করি। অসচ্ছল পরিবারের মেধাবী ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় অন্য যার যার অবস্থান থেকে যদি সবাই এগিয়ে আসে, তাহলে আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে।’
স্মৃতিমণি: বাবা-মায়ের আদর জোটেনি স্মৃতিমণির। জন্মের তিন মাসের মধ্যেই তাঁর বাবা মারা যান। ঠিকমতো কথা বলতে শেখার আগেই তাঁর মা বিয়ে করে অন্যের সংসারে চলে যান। পিতামাতাহীন স্মৃতির ঠাঁই হয় তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাটিকাটার শ্রমিক চাচা মজিবর রহমানের কাছে। এর পর থেকেই স্মৃতিমণির নিত্যসঙ্গী দারিদ্র্য। হাজারটা নেইয়ের মধ্যেও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ কমেনি তাঁর। এসএসসিতে শালবাহান বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান তিনি।
সাফল্য ধরে রাখা প্রসঙ্গে স্মৃতিমণি বলেন, ‘এসএসসি পাসের পর ভেবেছিলাম এখানেই শেষ। পরে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে সহযোগিতা না পেলে আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। আবার শুরু হবে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।’ তিনি বলেন, ‘যদি উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাই, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হতে চাই। আমার ইচ্ছা কলেজের শিক্ষক হওয়া।’ 
স্মৃতিমণি তেঁতুলিয়ার কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। তাঁর চাচা মজিবর রহমান বলেন, ‘অভাব-অনটনের সংসার। অনেক কষ্ট করেছে স্মৃতিমণি। এসএসসিতে এমন ভালো ফল করবে, ভাবতে পারিনি। এইচএসসিতেও ভালো ফল করেছে। আমার পক্ষে তার জন্য কিছু করার সুযোগ নেই।’ 
কামরুল: পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের ‘আসমানী’ কবিতার মতোই তা যেন—‘বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি/ একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি’—এক চিলতে জমির ওপর ছাউনি তুলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোনো রকমে মাথা গোঁজার চেষ্টা কামরুলদের পরিবারের। ঘরটি এক কক্ষের। চালা টিনের। বেড়া মুলি বাঁশের।
রাজমিস্ত্রির সহকারী (জোগালি) হিসেবে কাজ করতেন কামরুল হাসান। স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে জোগালির কাজ করেই সংসারের খরচ জোগাতেন। এই অবস্থাতেই এসএসসিতে জিপিএ-৫ পান তিনি। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় কলেজে ভর্তি হলেও তাঁর পক্ষে পড়ালেখা চালিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট থেকে পাওয়া শিক্ষাবৃত্তি তাঁকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায়। কামরুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার হাজি ফিরোজ মিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন।
কামরুলদের বাড়ি একই উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। তাঁর বাবা তকবির হোসেন দিনমজুর। মা ফেরদৌসী বেগম। তিনি বলেন, ‘না দিতে পারছি পিন্ধন, না খাওন। এর পরও পোলাডা (কামরুল) ভালাভাবে পাস করতাছে। দোয়া করুইন, হে যেন বড় অফিসার হইতে পারে।’ চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে কামরুল বড়। এক ঘরে হইচইয়ের মধ্যেই তাঁকে পড়াশোনা করে যেতে হয়েছে। 
কামরুল বলেন, রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করে এসএসসিতে পড়ার খরচ জুগিয়েছিলাম। তবে এইচএসসিতে আর কায়িক পরিশ্রমের কাজ করতে হয়নি। শিক্ষাবৃত্তির টাকায় পড়ার খরচ বহন করা গেছে। তাঁর স্বপ্ন উচ্চশিক্ষা অর্জনের পর প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা হওয়া।
টুম্পা রানী সরকার: বিমল চন্দ্র সরকার পেশায় কর্মকার (লোহার দোকানে কাজ করেন)। তাঁর আয় যৎসামান্য। এর ওপরই নির্ভর করতে হয় পাঁচ সদস্যের পুরো পরিবারকে। খাওয়া-পরার খরচ বাদ দিলে অবশিষ্ট কিছু থাকে না। আর্থিক টানাটানির মধ্যেও পড়ালেখার প্রতি টুম্পার আগ্রহ কমেনি। নিজের চাওয়া-পাওয়া সব সময় ভুলে মনোযোগী ছিলেন পড়ালেখায়। তাঁর আগ্রহ ও পরিশ্রমের স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন এসএসসি পরীক্ষাতেই। ২০১২ সালে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার জনতা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান তিনি। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজে। সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
টুম্পাদের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কামলাবাজ গ্রামে। তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ফল ঘোষণার পর প্রথম আলোকে টুম্পা বলেন, ‘বাবা- মা ও আপনাদের (প্রথম আলোর) সম্মান আমি রাখতে পেরেছি। এতে আমি খুব খুশি। দোয়া করবেন, আমি পড়ালেখা করে যেন ডাক্তার হতে পারি।’ 
টুম্পার মা পার্বতী রানী সরকার ও বাবা বিমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মেয়ের ভালো ফলাফলে আমরা খুবই খুশি। অভাবের সংসারে সে আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। বৃত্তির টাকা ও আত্মীয়স্বজনের আর্থিক সহায়তায় এত দিন টুম্পার লেখাপড়ার খরচ চলেছে। আমাদের যা অবস্থা, তাতে তার সামনের লেখাপাড়ার খরচ চালানো কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। এখন কী করে যে কী হবে, তা ওপরওয়ালাই জানেন।’ 
ময়মনসিংহের মুমিনুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. আবু তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘টুম্পা অত্যন্ত মেধাবী। লেখাপড়ায় সার্বিক সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সে আরও ভালো করবে।’
প্রশান্ত রায়: ছেলে প্রশান্তকে নিয়ে বড় স্বপ্ন বাবা আষাঢ়ু রাম রায়ের। দিনমজুর বাবা ছেলের বায়না পূরণ করতে পারবেন না জেনে লেখাপড়ার খরচের বাইরে অন্য কোনো বিষয়ে চাওয়া-পাওয়া ছিল না প্রশান্তের। বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য লেখাপড়াকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। অভাব-অনটনের মধ্যেও ২০১২ সালে তিনি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সোনাহার দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। এবার পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
প্রশান্ত রায় বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করার পরেও হয়তো আমাকে অকালে ঝরে যেতে হতো। শিক্ষাবৃত্তির কারণে আমি এইচএসসি পড়ার খরচ জোগাতে পেরেছি।’ 
প্রশান্তর মা প্রতিমা রানী রায় বলেন, ‘ছেলের অনেক ইচ্ছা সে ডাক্তার হবে। কিন্তু এত টাকা হামরা পামো কোনঠে।’
হাসান মোল্লা: কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের আজিমুদ্দিন গ্রামে হাসান মোল্লার বাড়ি। বাবা ছাত্তার মোল্লা মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য জাল বুনে তা বাজারে বিক্রি করেন মা আমেনা বেগম। বড় ভাই নেছার মোল্লা স্থানীয় বাজারে দর্জির কাজ করেন। অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণির পরই পড়ালেখার পাট চুকে যায় ছোট বোন মাসুদা বেগমের। সহায়সম্বল বলতে বসতভিটা ছাড়া আর কিছু নেই হাসানদের।
আর্থিক দুরবস্থা হাসানকে পোড়ালেও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহকে দমাতে পারেনি। ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কলাপাড়া উপজেলার তেগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পান তিনি। ওই বছর তিনি গোটা উপজেলার মধ্যে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পাওয়া একমাত্র শিক্ষার্থী ছিলেন। হাসান পঞ্চম শ্রেণিতেও বৃত্তি পেয়েছেন। ভালো ফলের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন এইচএসসিতেও। কলাপাড়ার আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
হাসান বলেন, ‘আমি সব সময়ই ভাবতাম, পড়াশোনা করেই আমাদের মতো ছেলেদের বড় হতে হবে। যার ফলে শত কষ্টের মধ্যেও পড়াশোনা ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা করতাম না।’ তাঁর সাফল্যে গর্বিত বাবা ছত্তার মোল্লা ও মা আমেনা বেগম। তাঁর মা বলেন, ‘আমরা যে রহম পারি চলি, আমাগো দিন আল্লায় চালাইয়া নেয়। পোলাডার লাইগ্যা তো এ্যাহন আরও চিন্তা বাড়ছে। সামনের দিকে উপরের ক্লাসে পড়ার খরচ, থাহনের খরচ, হেইয়া ক্যামনে জোগাড় অইবে কইতে পারি না।’ 
আলহাজ জালাল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান বলেন, ‘হাসানের উচ্চশিক্ষার জন্য বড় বাধা অর্থনৈতিক সংকট। এখন সেই সহায়তাটা প্রয়োজন।’
অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনের মাঝপথে আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে যেন ঝরে না পড়ে, সে জন্য ২০০৭ সাল থেকে শিক্ষাবৃত্তি চালু করে প্রথম আলো। দিনে দিনে বৃত্তি পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সঙ্গে এই কার্যক্রমের পরিসরও। পরে প্রথম আলো ট্রাস্ট শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১০ সাল থেকে অদম্য মেধাবীদের আর্থিকভাবে সহায়তা দেওয়ার এই কার্যক্রমে প্রথম আলো ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত হয় ব্র্যাক ব্যাংক। গঠন করা হয় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো অদম্য মেধাবী তহবিল।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মীর মাহমুদুল হাসান, নীলফামারী; সুমন মোল্লা, ভৈরব; শহীদুল ইসলাম, পঞ্চগড়; সালেহ আহমদ, ধরমপাশা (সুনামগঞ্জ); নেছারউদ্দিন আহমেদ, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)।