প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ
‘কম্বলকোনা প্যায়্যা ভালো হলো, আচকে আরামে নিন পারব্যার পামো’
‘না খ্যায়্যা এ্যাকবেলা থাকান যায়। কিন্তু শীতের কষ্টে রাইতে ঘুম ধরে না। কম্বলকোনা প্যায়্যা ভালো হলো, বাবা। আচকে আরামে নিন পারব্যার পামো। আর হামারঘরোক শীত নাগব্যার নোয়ায়।’ আজ বুধবার সকালে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে দেওয়া কম্বল পেয়ে এসব কথা বলেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার মধ্য হাটবামুনী গ্রামের বৃদ্ধা হিরণ বালা (৮০)।
গাইবান্ধা বন্ধুসভার সদস্যদের সহযোগিতায় ২২০ জনকে একটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। সাদুল্লাপুর উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়। উপজেলার কামারপাড়া ইউনিয়নের কামারপাড়া, মধ্য হাটবামুনী, উত্তর হাটবামুনী, দক্ষিণ হাটবামুনী, পূর্ব কেশালীডাঙ্গা, পশ্চিম কেশালীডাঙ্গা, কিশামত বাগচী, নুরপুর, লক্ষ্মীপুর ও হিয়ালী গ্রামের গরিব, অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল দেওয়া হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী বন্ধুসভার সদস্যরা ওই সব গ্রামে গিয়ে খুঁজে খুঁজে অসহায়দের বের করে কম্বল বিতরণের স্লিপ দিয়ে আসেন।
কম্বল পেয়ে মধ্যহাটবামুনীর পার্শ্ববর্তী পশ্চিম কেশালীডাঙ্গা গ্রামের খায়রন নাহার (৫০) বলেন, ‘এবারক্যা শীতোত এ্যাকনা কম্বলের জন্যে চেয়ারম্যানের বাড়িত ম্যালা দিন গেছিনু। তাই হামাক কম্বল দ্যায় নাই। কয়, কোনটে থাকি কমবোল দেমো। সোরকার থাকি আসি নাই। পোত্তম আলোর কম্বল প্যায়া উপোকার হলো।’
পূর্ব কেশালীডাঙ্গা গ্রামের শ্যামল চন্দ্র (৫১) বলেন, ‘তিন বচর থাকি কোনো সোররকারি কম্বল পাই নাই। আচক্যা পোত্তম আলোর কম্বল পানো। ছোট নাতিটা শীতের কষ্টে ঘুম পারব্যার পায় না। অ্যাচকা রাতোত নাতিটাক নিয়্যা আরাম করি ঘুম পারব্যার পামো। শীত হামারঘরোক আর কাবু করব্যার পাবার নোয়ায়।’
উত্তর হাটবামুনী গ্রামের নবাব আলী (৫৬) বলেন, ‘দুকন্যা খ্যাতা (কাঁথা) দিয়া রাত কাটাই। সন্ধ্যাত থাকি আগুন জ্বলে থাকি। বউ কোছিলো একনা কম্বল আনার জন্যে। কিন্তু ট্যাকার অবাবোত কিনি আনব্যার পায় নাই। তোমরা হামাক কম্বল দিবার আচ্চেন, খোদায় তোমারঘরোক আলোর ভালো করুক।’
কম্বল বিতরণের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কামারপাড়া প্যারীমাধব বহুমুখী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম, কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোজাহিদুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক সোহেল রানা ও শামসুল আলম, পল্লিচিকিৎসক মো. সিজু মিয়া, সমাজসেবক সাইদুল ইসলাম, মো. নুরুজ্জামান মিয়া, কাজী ইশতিয়াক কবির, মীর বকস, পলাশ কুমার রায়, কামারপাড়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মিয়া ও মোত্তাল্লেব হোসেন খান, গাইবান্ধা প্রথম আলো বন্ধুসভার উপদেষ্টা রুমা শাহীন, বর্তমান সভাপতি মেহেদী হাসান সরকার, সহসভাপতি ওবায়দুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. মিল্লাত হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লিমন প্রধান ও ইমরান মিাসুদ, উপসাংগঠনিক সম্পাদক নিশাত বাবু, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, নারীবিষয়ক সম্পাদক সানজিদা রহমান, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক আসিফ আকন্দ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক মোছা. মেঘা, সদস্য সাহাত মিয়া ও প্রথম আলোর গাইবান্ধা প্রতিনিধি শাহাবুল শাহীন প্রমুখ।
কামারপাড়া প্যারীমাধব বহুমুখী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জানি সংবাদপত্রের কাজ খবর পরিবেশন করা। কিন্তু প্রথম আলো নিজের দায়িত্বের বাইরে মানবিক কাজগুলোও করছে। শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সব পত্রিকারই এই কাজে এগিয়ে আসা উচিত।’
শীতার্ত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।