এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধানমন্ডিতে পুরুষ সমাবেশ আজ

এসিড নিক্ষেপকারীদের ৯৯ শতাংশই পুরুষ। আর এসিড-আক্রান্তদের ৭৩ শতাংশই নারী ও শিশু। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে সমাজকে এসিড-সন্ত্রাসমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন পুরুষের অঙ্গীকার। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ পালন উপলক্ষে আজ অনুষ্ঠিত হবে পুরুষ সমাবেশ। এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ) ও প্রথম আলো যৌথভাবে এর আয়োজন করেছে। ‘আর একটি মুখও যাতে এসিডে ঝলসে না যায়’—আজ রোববার এ অঙ্গীকার করবেন প্রায় ১০ হাজার পুরুষ। বেলা সাড়ে তিনটায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে পুরুষ সমাবেশ। এতে সহযোগিতা করছে বেসরকারি টেলিভিশন দেশটিভি। গতকাল শনিবার পুরুষ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা ও এসিড-সহিংসতার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বক্তারা সবাইকে আজকের পুরুষ সমাবেশে অংশ নিয়ে এসিড-আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুরুষদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ২০০২ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় এসিড সহিংসতাবিরোধী শোভাযাত্রা। কয়েক বছর ধরেই পুরুষদের অঙ্গীকার নিয়ে আয়োজিত সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সব মহলে সাড়া ফেলেছে। পুরুষ সমাবেশে এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পুরুষের সংহতি প্রকাশ, বিভিন্ন গানের মাধ্যমে এসিডবিষয়ক তথ্য উপস্থাপন, ঘোষণাপত্র পাঠ, সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালানোসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে সর্বস্তরের পুরুষ ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ সমাবেশে হাজির হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ সমাবেশ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় (যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বগুড়া, নরসিংদী, নেত্রকোনা, কুমিল্লা, ভোলা, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, গুরুদাসপুর, চকরামপুর, চাটমোহর, পাবনা, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, জামালপুর, গাজীপুর, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ ও রংপুর) ৮ মার্চ নারী দিবসে সংবাদ সম্মেলন, পুরুষ সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান পারভীন মাহমুদ, নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান, শিল্পী রাশেদ উদ্দিন আহমেদ তপু ও এএসএফের বোর্ড-সদস্য ফজিলাতুন নেছা। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন পলাশ চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল কাইয়ুম জানান, প্রথম আলো ট্রাস্টের অধীনে এসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিলের আওতায় এ পর্যন্ত ২৩০ জন নারীকে চিকিত্সা-শিক্ষাসহ সার্বিকভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথম আলো এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নেয়। পরে এসিড-আক্রান্তদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে নিতে কাজ শুরু করা হয়। পারভীন মাহমুদ বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে সমাজ থেকে এসিড-সন্ত্রাস নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এএসএফ। ২০২১ সালের তরুণ প্রজন্ম এসিড-সন্ত্রাসকে একটি ইতিহাস হিসেবে জানবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মনিরা রহমান এএসএফ, এসিড-আক্রান্তদের পরিসংখ্যান ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বক্তব্য দেন। তিনি জানান, ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন প্রায় তিন হাজার ব্যক্তি। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতাসহ বিভিন্ন কারণে আইনি সহায়তা পেয়েছেন খুব কম সংখ্যক ব্যক্তি। শিল্পী রাশেদ উদ্দিন বলেন, তরুণ প্রজন্ম যাতে এ সন্ত্রাসের সঙ্গে না জড়ায়, সে ব্যাপারে সবার দৃষ্টি রাখতে হবে। ফজিলাতুন নেছা আইনি সহায়তা না পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, প্রশাসন সব সময় এসিড-সন্ত্রাসীর পক্ষ নেয়। প্রশাসনের প্রতি স্তরে দুর্নীতি, ফলে টাকা ছাড়া এক ধাপও সামনে যাওয়ার উপায় থাকে না। এসিডদগ্ধরা এ টাকার জোগান দিতে পারে না বলেই আইনি সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।