একজন লিমা আক্তার
মদনপুর ইউনিয়ন ভোলার ভেতরে একটা দ্বীপ। মদনপুরে সরকার থেকে দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তিনতলা একটি ভবন তৈরি করা হয়। ওই ভবনে মদনপুর আলোর পাঠশালা নামে প্রথম আলো ট্রাস্ট স্কুল পরিচালনা করছে। সরকার বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করছে। সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট স্কুলে বিনা মূল্যে পড়াসহ নানা ব্যবস্থা করেছে।
মদনপুর আলোর পাঠশালা থেকে এসএসসি প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একজন লিমা আক্তার। সে স্কুলের নিয়মিত ছাত্রী। পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী। বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথে কোনো ছেলে বা মেয়ে স্কুলে না আসতে চাইলে তাকে স্কুলে আনার জন্য সে উদ্যোগ নেয়। কোনো পিরিয়ডে নির্ধারিত শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলে প্রধান শিক্ষককে বলে অন্য শিক্ষককে ক্লাসে আনার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করে। সে ক্লাস ক্যাপ্টেন হিসেবেও সফলতা দেখিয়েছে। নিজের পড়াশোনার বাইরে চরের অন্য মেয়েদের পড়াশোনায় সহায়তা করে সে। এলাকায় বাল্যবিবাহ বন্ধের ক্ষেত্রে লিমার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। সে এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে। ছাত্রীদের বয়ঃসন্ধিকালে সচেতনতা তৈরি করে। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা ও এর বিস্তার সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বিদ্যালয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সাধ্যমতো পড়াশোনা বোঝাতে সাহায্য করাসহ বিভিন্ন কাজে প্রশংসনীয় উদ্যোগ নেয় লিমা আক্তার।
লিমার বাবা মো. ফারুক দৌলত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। তিনি তাঁর মেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে আগ্রহী।
মো. ফারুক দৌলত স্কুলের মাসিক অভিভাবক সভায় বলেন, ‘আমাদের এই নদীবেষ্টিত এলাকায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ছিল না কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর ঝরে পড়ত। স্কুল না থাকলে হয়তো মেয়েকে বিয়ে দিতে হতো। আজ মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেবে, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। আমাদের এ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসে প্রথম আলো ট্রাস্ট। মদনপুর আলোর পাঠশালা আমাদের সন্তানদের বিনা মূল্যে লেখাপড়া করাচ্ছে। এখানকার শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার ফলে আমরা এখন স্বপ্ন দেখি আমাদের ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে।’