‘অহন আমরারে কাছেই ঘ্যাঁষতে দেয় না মানুষ’

প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নেত্রকোনার কলমাকান্দার ডোয়ারিকোনা এলাকায় মল্লিকের চরে ১০০ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল দুপুরে।
ছবি: প্রথম আলো

ঘরবাড়ি ছাড়াই জীবনটা কাটিয়ে দিলেন মিনারা আক্তার (৬৮)। তাঁরা বেদে, বংশপরম্পরায় নৌকাতেই জীবন কেটেছে তাঁর। তাঁর স্বামী মিরাস আলী ১০ বছর আগে মারা গেছেন। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে, ছেলের বউ ও তিন নাতি-নাতনি নিয়ে এখন মিনারার সংসার। বয়সের ভারে এখন ন্যুব্জ প্রায়। তবুও সংসার চালানোর তাগিদেই গ্রামে গ্রামে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হয় তাঁকে। কিন্তু করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি আর মানুষের বাড়িতে যেতে পারেন না। আয় একেবারেই নেই। এর মধ্যেই বন্যা এসে পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। ছয় সদস্যের পরিবারটির এখন অনাহারে থাকার দশা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা সদরের ডোয়ারিকোনা এলাকায় মল্লিকের চরে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ নিতে এসেছিলেন মিনারা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমরা বাইদ্যা মানুষ। বাড়ি বাড়ি গিয়া ঝাড়-ফুঁ, তাবিজ-কবচ বেচি। কিন্তু করোনা আর বন্যার কারণে অহন আমরারে কাছেই ঘ্যাঁষতে দেয় না মানুষ। দূর দূর কইরা তাড়াইয়া দেয়। আমরার ঘরবাড়ি নাই দেইখা মাইনসের বাড়িত কামকাজও দেয় না। ঘরে খাওন নাই। প্রতিবন্ধী পোলাসহ ছয়জন লইয়া আমি বুড়া মানুষ খুবই কষ্টে আছি। এই চাউল, ডাইল, তেল, লবণ, আলু পাইয়া খুব বালা হইছে।’

গতকাল প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে কলমাকান্দার ডোয়ারিকোনা এলাকার মল্লিকের চরে ১০০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৮টি বেদে পরিবার। এসব ত্রাণের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, আলু ও লবণ। বন্ধুসভার সদস্যদের সঙ্গে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেন কলমাকান্দা সরকারি কলেজের প্রভাষক প্রণয় কুমার তালুকদার, উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আলম, বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিভাস সাহা প্রমুখ।

ত্রাণ নিতে এসেছিলেন বৃদ্ধ নিতাই চন্দ্র দাস (৭৪)। তাঁর বাড়ি বাগারপাড়া এলাকায়। নিতাইয়েরও নিজের কোনো ঘরবাড়ি নেই। অন্যের বাড়িতে একটি পরিত্যক্ত ঘরে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে থাকেন। আগে শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু বয়সের ভারে এখন বছর দুয়েক ধরে কাজ করতে পারেন না। তাই মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হাত পেতে চলতে হয় তাঁকে। চোখেও তিনি ঝাপসা দেখেন। তিনি বলেন, ‘করোনা আর বন্যা আইয়া আমি আরও বিপদে ফড়ছি। অহন কেউ আগের মতো সাহায্য করে না। মানুষের বাড়িত ভিক্ষা করতেও যাইতে ফারি না। হাত–পাওয়ে শক্তি নাই। চোখেও কম দেহি।’