অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে অনলাইন আড্ডা

অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে প্রথম আলো ট্রাস্টের জম্পেশ অনলাইন আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১৯ অক্টোবর ২০২০ দুপুর ১২টায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী জুম আড্ডায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০ জন অদম্য শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। তাঁদের কেউ ‘ব্র্যাক ব্যাংক - প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী’ তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন, কেউবা পড়াশোনা করছেন। আড্ডায় করোনাকালীন জীবনযাপন ও পারিবারিক নানা বিষয় উঠে আসে । এ সময় প্রথম আলো ট্রাস্টের সদ্য যোগদানকারী সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে সবাই অভিনন্দন জানান।

করোনাকালীন সময়ে জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। দেশ লকডাউনের মুখে পড়ে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে যে সকল শিক্ষার্থী নিজ বাড়ির বাইরে থেকে পড়াশোনা করেন তাঁদের বাড়ি ফিরে যেতে হয়। আমাদের অদম্য মেধাবীদের মধ্যে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন তাঁদেরও বাড়ি ফিরতে হয়। এতে করে অনেকেই নানা সমস্যার মধ্যে পড়েন।

আড্ডায় অনেক অদম্য মেধাবী জানান, তাঁরা প্রথম আলোর বৃত্তির টাকায় নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নেন। পাশাপাশি টিউশনি করে বাড়িতে বাবা-মায়ের কাছে কিছুটা খরচ পাঠাতেন। করোনার কারণে বাড়িতে চলে আসায় সেটা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় বাড়তি আয়ের পথ। পারিবারিকভাবে হন ক্ষতিগ্রস্ত।

এদিকে ব্র্যাক ব্যাংক - প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যনির্বাহী সদস্যরাও এই আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা তাঁদের নানা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। কমিটির দারিত্বপ্রাপ্তরা বলেন, পরিস্থিতি ভালো হলে সকল অদম্যকে নিয়ে একটা অনলাইন ডেটাবেইস তৈরি করার চিন্তা আছে। এ ছাড়াও যাঁরা ইতিমধ্যে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাঁদের মাধ্যমে সমাজের দুর্দশাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আশা ব্যক্ত করেন। কে কি করছেন জানতে চাইলে জানান, কেউ স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কেউ অধ্যয়নরত। তবে সবার ইচ্ছা, চাকরি পেয়ে পরিবার তথা সমাজের দুর্দশাগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবেন।

এ ছাড়াও আলোচনা সভায় কয়েকজন শিক্ষার্থী কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। যেমন অদম্য মেধাবী মো. শামিম রেজা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী) একটা কোচিং সেন্টারে এবার উচ্চমাধ্যমিক পাস করা অদম্য মেধাবীদের ৬০% ছাড়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারবেন। যে সকল এলাকায় প্রথম আলো ট্রাস্টের আলোর পাঠশালা আছে, সেসব এলাকার অদম্য মেধাবীরা এই স্কুলগুলোতে গিয়ে বিশেষ ক্লাস নিতে পারে। সাব্বির আহমেদ (নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত ) উচ্চমাধ্যমিক লেভেলের শিক্ষার্থীদের আইসিটিসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এদিকে নীলফামারী থেকে অদম্য মেধাবী ডা. মো. মাসুদ রানা যোগ দেন। মাসুদ রানা ৩৯তম বিসিএসে (স্বাস্থ্য) সহকারী সার্জন পদে সুপারিশকৃত হন। বর্তমানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। তিনি একজন ফ্রন্টলাইনার। করোনার সময় সম্মুখ সারিতে ছিলেন। ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। আবার সেরেও ওঠেছেন। ফিরেছেন আবার নিজ কাজে। এতে তিনি গর্বিত বোধ করেন। আড্ডায় উপস্থিত সকলেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানান।

আড্ডায় অংশগ্রহণকারী অদম্য মেধাবীরা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের একটা আয়োজন আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। দমবন্ধ হওয়া একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। এমতাবস্থায় পরিচিত মুখ ও প্রাণের মানুষদের সঙ্গে দেখা হওয়াটা মনে শক্তি যোগায়। মাঝে মাঝেই এ ধরণের আয়োজন করা হলে খুবই ভালো হবে।” আশা করছি আমরা আরও বেশি বেশি আড্ডা দিতে পারব, সবাই সবার সুবিধা-অসুবিধাগুলো জানব। একে অন্যের পাশে দাড়াঁব। সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা পুরো আড্ডায় ছিলেন এবং অদম্যদের নানা বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি অনুপ্রেরণামূলক পরামর্শ দেন।

পরিশেষে প্রথম আলোর ট্রাস্টি ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক সমাপনী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। পরিশ্রম করে কেউ ব্যর্থ হন না। চেষ্টা থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতা দূর করা যায়। তার বড় প্রমাণ হলো আমাদের অদম্য মেধাবী বন্ধুরা। তোমাদের সঙ্গে আমাদের বন্ধন চিরদিনের।’

‘অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি’ সারা দেশের গরিব কিন্তু মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার দুয়ার। অদম্য মেধাবীদের একেকটা গল্প বাকিদের জন্য হয়ে উঠেছে অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস। প্রথম আলো ২০০৭ সাল থেকেই শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আসছে। তবে ট্রাস্ট গঠনের পর থেকে এটি নিয়মিতকরণ করা হয়। ২০১০ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে এর পরিধি বাড়ে। ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্য দাতাদের সহযোগিতায় ৯৪২ জন শিক্ষার্থী সহায়তা পেয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহায়তায় মোট ৭১৮ জন বৃত্তি পেয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যান্য দাতা সংস্থা ও ব্যক্তি এই তহবিলের মাধ্যমে ২২৪ জনকে বৃত্তির সহায়তা দিয়েছেন। বর্তমানে ২৭১ জন বৃত্তি পাচ্ছে । এ বছর আরও প্রায় ১০০জন যুক্ত হবে। পুরো অনলাইন আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন।