অদম্য মেধাবী ফাল্গুনীর সঙ্গে ভার্চুয়াল আড্ডা

ফাল্গুনী সাহাছবি: প্রথম আলো

গতকাল ১১ নভেম্বর ২০২০ অদম্য মেধাবী ফাল্গুনী সাহাকে নিয়ে হয়ে গেল ভার্চুয়াল আড্ডা। আড্ডায় ফাল্গুনী সাহা তুলে ধরেন তার জীবনের নানা গল্প। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ফাল্গুনী সাহার জীবনের গল্পটা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। জীবন বুঝে ওঠার আগেই কঠিন বাস্তবতা বুঝতে হয়েছে তাঁকে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই হাত কনুই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। ফলে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু ফাল্গুনীর প্রচণ্ড আগ্রহের কাছে তা পরাজিত হয়। ভর্তি হন তৃতীয় শ্রেণিতে।

অনেক অনুশীলন করে কুনুই দিয়ে লেখা অভ্যাস করে ফেলেন। এভাবে দুই কুনুই দিয়ে লিখে প্রাথমিকে বৃত্তি, মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পান। তাঁর এই সাফল্য অব্যাহত থাকে উচ্চমাধ্যমিকেও। ২০১৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ফাল্গুনী জিপিএ–৫ পান।

২০১৩ সালের ৪ ও ১৬ আগস্ট ফাল্গুনীর সাফল্য নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্রথম আলোয়। পরে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি পান।

শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ২০১৩–১৪ শিক্ষাবর্ষে শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে বাবা মারা যান।

বাবার মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেও হাল ছাড়েননি তিনি। স্নাতক শেষে ২০১৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এ সময় বন্ধুদের কাছে জানতে পারেন ব্র্যাক প্রতিবন্ধীদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। জানার পর আবেদন করেন তিনি।

পরে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ফোন পান। দুই তরফা মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন এবং ব্র্যাকের বরিশাল সদর কার্যালয়ে মানবসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। ফাল্গুনী বলেন, এই চাকরি পাওয়াটা আমার জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। কারণ আমি যখন স্নাতকোত্তর পর্বে ছিলেন তখন আমার মা ব্রেইন স্ট্রোক করেন। ফলে অনেক সমস্যায় পড়ে আমার পরিবার। চাকরিটা আমি ও আমার পরিবারকে স্বস্তি এনে দেয়।’

আড্ডায় ফাল্গুনী আরও বলেন, ‘আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি বলে ওঠে আসতে পেরেছি। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট অদম্য মেধাবী শিক্ষাবৃত্তি আমার এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করেছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ফাল্গুনী বলেন, ‘আরও ভালো কিছু করতে চাই এবং আমার মতো যারা আছে তাদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আছে।’

সকল অদম্যদের জন্য কোনো পরামর্শ আছে কিনা জানতে চাইলে ফাল্গুনী জানান, ‘কখনো মনোবল হারানো যাবে না। সব বাধা বিপত্তিতে সাহস রাখতে হবে। সর্বোপরি যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। আমি বড় হয়ে যেন অতীত না ভুলে যাই, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’

অনুষ্ঠানটি একযোগে প্রচার করা হয় প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেল, প্রথম আলোর ফেসবুক, প্রথম আলো এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের ফেসবুক থেকে। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা।