ঘরবাড়ি, ফসলের খেতের ব্যাপক ক্ষতি করে বন্যার পানি নামছে। কিন্তু কর্মহীনতা আর খাবার কষ্ট এখনো রয়েই গেছে বলে জানালেন প্রান্তিক কৃষক আলমাছ আলী (৬০)।
শেরপুর সদর উপজেলার বলাইয়েরচর ইউনিয়নের ছোট ঝাউয়েরচর গ্রামের আলমাছ আলী গতকাল শুক্রবার এসেছিলেন প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণ নিতে। ত্রাণ পেয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই বইন্যা হয়। তয় এইবার ঘরে আছিল তিন সপ্তা। অহন পানি কমছে, কিন্তু কষ্ট কমে নাই। এই বিশাল বইন্যার মইদ্দে কেউ আমগর খোঁজ নেয় নাই। অনেক কষ্ট কইরা খায়া-না খায়া দিন পার করছি।’
বলাইয়েরচর ইউনিয়নের জঙ্গলদী, নয়াপাড়া, মধ্যপাড়া ও লছমনপুর ইউনিয়নের ছোট ঝাউয়েরচর গ্রামের বন্যাকবলিত ১০০ মানুষের মধ্যে গতকাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এসব ত্রাণের মধ্যে ছিল চাল, ডাল, আলু, লবণ ও সয়াবিন তেল। শেরপুরের প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা জঙ্গলদী বড় বাজার এলাকার দি মডার্ন পাবলিক স্কুল মাঠে ও ছোট ঝাউয়েরচর গ্রামের একটি খোলা স্থানে এসব ত্রাণ বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণে অংশে নেন কলেজশিক্ষক ও সমাজকর্মী মলয় চাকী, শেরপুর বন্ধুসভার সভাপতি মাশুকুর রহমান, সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক রবিন সাহা প্রমুখ।
বলাইয়েরচর ইউনিয়নের ছোট ঝাউয়েরচর গ্রামে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ৪-৫টি পরিবার বাস করে। তাঁদের সবাই শ্রমজীবী। তাঁদের একজন বিনেন্দ্র হাজং। তিনি বলেন, ‘বন্যায় খেতখামার সব তলাইয়া গেছে। অহন কোনো কাজকাম নাই। হাতে টাকাপয়সা নাই। আমগরে কেউ কোনো সাহায্যও দেয় নাই। আপনারাই প্রথম সাহায্য দিলেন।’
জঙ্গলদী পূর্বপাড়া গ্রামের ৭০ বছরের জরিতন বেওয়ার স্বামী নেই। ছেলেমেয়েদেরও পৃথক সংসার। করোনা সংকটে গ্রামের লোকজনের কাছে চেয়েচিন্তেই এত দিন কোনো রকমে পেট চালিয়েছেন জরিতন বেওয়া। ত্রাণ পেয়ে এই বৃদ্ধা বলেন, ‘আপনেগরে রিলিপ (ত্রাণ) দিয়া আইজ চাইড্যা ভাল মতন খামু।’
অনুদান
বন্যায়ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত জমা পড়েছে ২০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৮০০টি পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হয়েছে। খরচ হয়েছে ১৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা।
অনুদানদাতাদের মধ্যে দিলরুবা হোসেন ১ লাখ টাকা, মেজবাউল ইসলাম ২০ হাজার, আবদুল করিম ১৫ হাজার, হাসিনা খাতুন ১০ হাজার, জেসমিন আরা ১০ হাজার, রানা মোরসালিন ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন।