হতাহতদের পরিবারের পাশে মেরিল-প্রথম আলো

রানা প্লাজায় হতাহতদের সন্তানদের পড়াশোনায় শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে মেরিল–প্রথম আলো

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসে সেদিন পাঁচটি পোশাক কারখানার ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন এক হাজারের বেশি শ্রমিক। এ ঘটনার পর ২৬ এপ্রিল পূর্বনির্ধারিত মেরিল–প্রথম আলো অনুষ্ঠানে ছিল শোকের পরিবেশ। ওই বছর অনুষ্ঠানটি রানা প্লাজায় হতাহত ব্যক্তিদের উৎসর্গ করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এক দিনের বেতন থেকে দুই লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে মেরিল-প্রথম আলো তহবিল শুরুর ঘোষণা দেন। এরপর স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ১০ লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন। এরপর একে একে শিল্পী ও কলাকুশলীরা অনুদান দেওয়ার কথা জানান। হাসি–আনন্দে মাতিয়ে রাখা বিনোদনজগতের মানুষেরা সেদিন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আয়োজনে জ্বালান এক অন্য আলো। রানা প্লাজা ধসের দুই দিন পর ২৬ এপ্রিল মোট ৫৪ লাখ টাকা নিয়ে ‘মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল’ যাত্রা শুরু করে। সমাজের সব স্তরের মানুষ এই তহবিলে অর্থ দেন। রানা প্লাজা ধসের প্রথম দিন থেকেই প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওষুধ ও সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালগুলোয় কাজ শুরু করে প্রথম আলো বন্ধুসভা ।

সাভার সহায়তা তহবিলে বিভিন্ন সময়ে মোট জমা হয় প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এই তহবিল থেকে উদ্ধারকাজ ও চিকিৎসায় প্রায় ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ১০১ ব্যক্তিকে পুনর্বাসনসহায়তায় ব্যয় করা হয় ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা। বাকি অর্থ থেকে ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত করা হয়। এই আমানতের লভ্যাংশ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত (আহত-নিহত) পরিবারের ২০ সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনায় এই সহায়তা দেওয়া হবে।

রানা প্লাজায় দুর্ঘটনায় আহত শিলা বেগমের মেয়ে তানজিলা এই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। স্নাতক সম্পন্ন করেছেন নিহত ইসমাইল বিশ্বাসের মেয়ে রায়মা জাহান, ডিপ্লোমা শেষ করেছেন ছেলে ইমাম হাসান।

দুর্ঘটনার পর ৯ বছর কেটে গেছে। আহত অনেকেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়ে প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতি। মেরিল-প্রথম আলো ট্রাস্ট সাভার সহায়তা তহবিল সেই স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে এসেছে। সাহস জুগিয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। সব বাধা–বিপত্তি পেরিয়ে তাদের মুখে আজীবন অমলিন হাসি ধরে রাখতে পাশে দাঁড়িয়েছে।