মেরিল–প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের ঈদ শুভেচ্ছা পেলেন শিক্ষার্থীরা
সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার সময় রোকেয়া পারভিন আর তাঁর স্বামী রাশেদুল ইসলাম একসঙ্গে আটকা পড়েছিলেন। রোকেয়া ৭২ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলেও ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে স্বামীর মরদেহ পাওয়া যায় ১৭ দিন পর। তাঁদের একমাত্র সন্তান খাদিজা আক্তার এখন সাভার ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
জিপিএ–৪.৮৩ পেয়ে গত বছর এসএসসি পাস করেছে খাদিজা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে বসে বলছিল, সে কার্ডিওলজিস্ট হতে চায়। মেরিল–প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে খাদিজাসহ সাতজন শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা এসেছিলেন প্রথম আলো কার্যালয়ে। রানা প্লাজা ধসে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের ২০ সন্তানকে ২০১৪ সাল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট।
এই শিক্ষার্থীদের হাতে আজ ঈদের উপহার তুলে দেন সাহিত্যিক ও প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া, প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানা, লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফসহ আরও কয়েকজন। তহবিলের আওতাভুক্ত দূরের শিক্ষার্থীদের ঈদের শুভেচ্ছা উপহার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে তাঁদের নিজ নিজ ঠিকানায়।
রেদোয়ানের মায়ের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিল ছোট্ট রাফসা আক্তার রাহা। তহবিলের তালিকাভুক্ত না হলেও ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসতে রাহার ভালো লাগে বলে জানাল। ছয় মাস বয়সে এখানে প্রথম মায়ের সঙ্গে এসেছিল সে। এখন সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী।
দুপুরে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা ছিলেন রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকার। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রেদোয়ান হোসেন। রেদোয়ানের মায়ের সঙ্গে উপস্থিত হয়েছিল ছোট্ট রাফসা আক্তার রাহা। তহবিলের তালিকাভুক্ত না হলেও ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম আলো কার্যালয়ে আসতে রাহার ভালো লাগে বলে জানাল। ছয় মাস বয়সে এখানে প্রথম মায়ের সঙ্গে এসেছিল সে। এখন সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। আর রেদোয়ান এখন রাজধানীর ধানমন্ডি নিউ মডেল ইউনিভার্সিটিতে ফিন্যান্স নিয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তিনি প্রথম আলোর এই সহায়তা কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন অষ্টম শ্রেণি থেকে। বাবা শেখ ইউসুফ ছিলেন রানা প্লাজা পোশাক কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার। দুর্ঘটনার ১৩ দিন পর উদ্ধার হয়েছিল তাঁর মরদেহ।
আয়োজনের শুরুতে সব শিক্ষার্থীকে একটি কাগজে লিখতে দেওয়া হয় তাঁদের স্বপ্নের কথা। রেদোয়ান লিখেছেন, তিনি বহুজাতিক কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করতে চান। ব্যাংক কর্মকর্তা হতে চান বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৪.১৭ পেয়ে এইচএসসি পাস করা হাসান মাহমুদ। পঞ্চম শ্রেণি থেকে তিনি এ সহায়তার আওতাভুক্ত। হাসানের সঙ্গে তাঁর বোন ফারজানা আক্তারও মেরিল–প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের তালিকাভুক্ত।
ফারজানা পড়ছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। দুই সন্তানের জন্য প্রতি মাসে পাওয়া অর্থটা খুব প্রয়োজন হয় বলে জানালেন ওদের সঙ্গে আসা মা জেসমিন বেগম। পরিবারটির এখনো কোনো উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়নি। ফারজানা লিখেছে, সে বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায়।
সব শিক্ষার্থীর হাতে উপহার তুলে দেওয়ার পর শুরু হয় প্রথম আলোর সাংবাদিকদের সঙ্গে ছবি তোলার পর্ব। দৌড়ে এসে তখন সবার সামনে দাঁড়াল ছোট্ট রাহা। নিজেকে প্রথম আলোর একজন বলে মনে করে রাহা। রাজধানীর মিরপুর থেকে এসেছে ইয়াছিন রহমান, সাভার থেকে এসেছে পাপিয়া আক্তার ও কামরুজ্জামান রোহান। ওদের কেউ হতে চায় প্রকৌশলী, কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সম্মানজনক অন্য কোনো পেশায়।
আনিসুল হক শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার তুলে দিচ্ছিলেন আর বলছিলেন, এই শিক্ষার্থীরা যখন চিকিৎসক হবেন, তত দিনে তাঁর নিজের বয়সও বাড়বে। অসুখ হলে তিনি ওদের কাছেই যাবেন চিকিৎসার জন্য। এই আশ্বাস পেয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠল রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বাবা অথবা মাকে হারানো এই সন্তানদের চোখ–মুখ।