রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে প্রথম আলো ট্রাস্ট

মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রথম আলো ট্রাস্টের কর্মীরা। গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো কার্যালয়ে।
ছবি: প্রথম আলো

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দুই দিন পর ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল ‘মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল’ গঠিত হয়েছিল। এই তহবিল থেকে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২০ সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনায় এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ পোশাকশিল্পের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসে পাঁচ পোশাক কারখানার অন্তত ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন এক হাজারের বেশি শ্রমিক। দুর্ঘটনার প্রথম দিন থেকেই প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালগুলোতে ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরা।

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এক দিনের বেতন থেকে প্রাপ্ত দুই লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী অনুদান দেন ১০ লাখ টাকা। একে একে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এতে অনুদান দেন। মোট ৫৪ লাখ টাকা নিয়ে তহবিলের যাত্রা শুরু।

পরে সব মিলিয়ে সাভার সহায়তা তহবিলে বিভিন্ন সময়ে জমা হয় প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ থেকে প্রায় ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয় উদ্ধারকাজ ও চিকিৎসাসেবায়। ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় ক্ষতিগ্রস্ত ১০১ জনের পুনর্বাসনে। তহবিলের বাকি টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতপত্র করা হয়েছে। অবশিষ্ট ২ লাখ টাকা সাভার সহায়তা তহবিলে নগদ জমা আছে।

এই আমানতের লভ্যাংশ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২০ সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। এই শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে এরই মধ্যে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন দুর্ঘটনায় নিহত ইসমাইল বিশ্বাসের মেয়ে রায়মা জাহান, ডিপ্লোমা শেষ করেছেন ছেলে ইমাম হোসেন। রায়মা ও ইমামসহ পড়াশোনা শেষ হওয়া চারজনের জায়গায় সম্প্রতি নতুন চারজনকে শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে।

বর্তমানে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ইউসুফ রানার ছেলে রেদওয়ান হোসাইন ফাইন্যান্সে স্নাতক এবং মেয়ে রাফসা আক্তার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। আহত শিলা বেগমের মেয়ে তানজিলা ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে এখন বরিশাল মহিলা কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক করছেন। নিহত ফোরকান হাওলাদারের দুই সন্তান হাসান মাহমুদ স্নাতক ও ফারজানা আক্তার সপ্তম শ্রেণিতে এবং নিহত কামাল হোসেনের ছেলে কামরুজ্জামান এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

খুশি খাতুনের মেয়ে শারমিন আক্তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও ছেলে নয়ন দশম শ্রেণিতে, পারভিন বেগমের মেয়ে পাপিয়া আক্তার এইচএসসি ও রাশেদুল ইসলামের মেয়ে খাদিজা আক্তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং মনোয়ারা বেগমের মেয়ে মাহবুবা পুষ্প এসএসসি ও রেজাউল করিমের ছেলে মেহেদী এসএসসি পরীক্ষার্থী।

আতাউর রহমানের এক ছেলে মৃদুল হোসেন দশম শ্রেণিতে এবং আরেক ছেলে আরাফাত রহমান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। মমিনুল ইসলামের মেয়ে মনিকা আক্তার এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে ও রিফাত হাসানের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস এসএসসি পরীক্ষার্থী। আহত রোজিনা আক্তারের মেয়ে সানজিদা আক্তার সপ্তম শ্রেণিতে, আফরোজা বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে, তানজির আহমেদ অষ্টম ও মিসকাতুল মারিয়া পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারের সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রথম আলো ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রূপালী চৌধুরী বলেন, প্রথম আলো ট্রাস্ট এই সহায়তা করে যাবে। তারা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট তাদের পাশে থাকবে।