রানা প্লাজা ধসের পর ঘুরে দাঁড়ানোর ৬ বছর উপলক্ষে ২০১৯ সালের ৪ মে ঢাকায় প্রথম আলো কার্যালয়ে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাহিয়া আক্তারসহ অন্যরা উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে গান গাইতে বলা হলে মাহিয়া ‘ হায়রে মা জননী আমার...’ গানটি গাওয়া শুরু করে। মাহিয়া আবেগে সুর-তাল-লয় ঠিক রাখতে পারেনি । মাহিয়ার গানে শুধু মাহিয়া নয়, উপস্থিত সবার চোখে পানি এনে দিয়েছিল।
মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল থেকে রানা প্লাজায় নিহত ২০ পরিবারের ২০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছেন। মাহিয়া ওই ২০ জন শিক্ষার্থীর একজন। মাহিয়া বর্তমানে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাহিয়া পড়াশোনা শেষ করে চিকিৎসক হতে চায়।
মাহিয়া আক্তার বরিশালে আগৈলঝরা গৈলা গ্রামে বাবার সঙ্গে থাকে। বাবা মো. মনির হোসেন ব্যাপারী আবার বিয়ে করেছেন, তবে নতুন মা বেশ ভালো। কিন্তু নিজের মাকে তো সে ভুলতে পারে না। মায়ের মৃত্যুর পর সরকারের পক্ষ থেকে মাহিয়ার পরিবার ৬ লাখ টাকা পেয়েছে। তবে এ টাকা নানা, নানি, মামা, মাহিয়া ও মাহিয়ার বাবার মধ্যে ভাগ হয়েছে। মাহিয়া আর মাহিয়ার বাবা যে ভাগ পেয়েছেন, তা থেকে আগের ঋণ পরিশোধসহ অন্যান্য খরচ মেটাতেই শেষ হয়ে গেছে।
মাহিয়া আক্তারের মা ময়না বেগমের লাশ গলে গিয়েছিল। তাই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মাহিয়াকে মায়ের লাশ দেখানো হয়নি। মা-বাবা ঢাকায় কাজ করতেন বলে মাহিয়া বরিশালে দাদির সঙ্গে থাকত। মাহিয়ার এখনো মনে আছে, রানা প্লাজা ধসে মা মারা যাওয়ার দুই দিন আগে বরিশাল থেকে মাহিয়াকে সাভারে এনেছিলেন মা। মায়ের নাকি মাহিয়াকে দেখতে ইচ্ছে করছিল। এক মামার সঙ্গে সে এসেছিল। দুর্ঘটনার দিন মা মাহিয়ার হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলেছিলেন, দোকান থেকে কিছু একটা কিনে খেয়ে নিতে। সন্ধ্যায় কাজ থেকে ফেরার পথে মাহিয়ার জন্য ভালো খাবার আনবেন। তারপর তো সবই শেষ।