ঈদ আসে, ঈদ যায়— মাকে মনে পড়ে
মাত্র ছয় বছর বয়সে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়েছেন পাপিয়া আক্তার। এরই মধ্যে এগারো বছর হলো, মা নেই। মা পারভীন বেগম রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। দুর্ঘটনার ১০ দিন পর তাঁকে মৃত উদ্ধার করা হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি ছিল বাগেরহাট জেলার চিতলমারী থানার বেতিবুনিয়া গ্রামে। পাপিয়ার বাবা জাহিদ কাজী পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। একটা দুর্ঘটনা সব এলোমেলো করে দেয়। একমাত্র মেয়ে পাপিয়ার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। এ সময় মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে পাপিয়ার পড়াশোনা সচল করা হয়। তৃতীয় শ্রেণি থেকে বৃত্তি দেওয়া শুরু হয় তাঁকে, পাবেন স্নাতকোত্তর পর্যন্ত।
পাপিয়া এ বছর জুনে সাভার মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। ২০২২ সালে সাভার স্কলার্স স্কুলের ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৪.৫৬ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষা পাস করেন। স্বপ্ন দেখেন, ভালোভাবে পড়াশোনা করে চাকরি করবেন, নিজেকে স্বাবলম্বী করবেন।
পাপিয়ার সঙ্গে কথা বোঝা গেল, গত এগারো বছরে মাকে হারানোর কষ্ট অনেকটা সামলে নিয়েছেন। এরই মধ্যে অনেকগুলো ঈদ চলেও গেছে মাকে ছাড়া। তবে বিশেষ সময়গুলোতে মাকে মিস করেন। মা থাকলে হয়তো পাপিয়ার ঈদ আরও রঙিন হতো। পাপিয়ার মনে পড়ে, মা তাঁর সাধ্যের মধ্যে মার্কেটে নিয়ে যেতেন। নিজ হাতে জামা-জুতা কিনে দিতেন। মায়ের হাতের পিঠা, সেমাই খেতেন। বিকেলে মায়ের সঙ্গে বেড়াতে যেতেন।
পাপিয়া বলেন, ‘ঈদ আসে, ঈদ যায়। মাকে মনে পড়ে। মা থাকলে অনেক কথা বলতে পারতাম, নিজের মনের কথা জানাতে পারতাম। মাকে হারানোর পর দাদি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে যায়। তাই দাদির কাছে মনে কথা বলি। আম্মুর কাছে যেগুলো বলতে পারতাম, সেগুলা এখন দাদির কাছে বলি।’
ঈদ উদ্যাপনের জন্য বাবা জামা-জুতা, কসমেটিকস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দিয়েছেন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এক সন্তান আছে। তবে সবাই তাকে ভালোবাসে। সবাই মিলে সাভারে ঈদ উদ্যাপন করবেন জানালেন।
ঈদের দিন সেমাই, নুডলস এবং বাইরে গিয়ে ফুচকা খাবেন। পরে কলেজের বান্ধবীদের নিয়ে সাভারের গোলাপ গ্রামে ঘুরতে যাবেন। এভাবেই কাটবে পাপিয়ার এবারের ঈদ।
উল্লেখ্য, মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল থেকে রানা প্লাজায় আহত ও নিহত পরিবারের ২০ শিক্ষার্থী পাচ্ছেন শিক্ষাবৃত্তি। পাপিয়া আক্তার ওই ২০ জন শিক্ষার্থীর একজন।