সাভার রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বাবাকে অকালে হারিয়েছেন ইয়াছিন রহমান মৃদুল। কিন্তু শিক্ষার পথ থেকে কখনো দূরে সরে যাননি। মায়ের অক্লান্ত চেষ্টা ও মৃদুলের অদম্য ইচ্ছা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁর এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল’ প্রকল্পটি। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ায় এই তহবিল।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পোশাক শ্রমিক এবং কর্মচারীদের ২০ জনের সন্তানকে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তাদেরই দুই ভাই ইয়াছিন রহমান মৃদুল ও আরাফাত রহমান হৃদুল। তাদের বাড়ি মানিকগঞ্জে। সেখানে বসত ভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই।
মৃদুল যখন ২০১৪ সালে প্রথম শ্রেণিতে পড়া শুরু করেন তখন থেকেই তাকে শিক্ষাবৃত্তি শুরু করে এই তহবিল। বৃত্তি সহায়তায় গত ১০ বছর পড়াশোনা করে এ বছর (২০২৪) ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন মিরপুরে অবস্থিত শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। গত ১৫ মে তে প্রকাশিত ফলে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। পরে এইচএসসি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নটর ডেম কলেজে ভর্তির সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। পিএসসি পরীক্ষাতেও মৃদুল জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
এদিকে মৃদুলের ছোট ভাই আরাফাত রহমান হৃদুলকে ২০২৩ সালের মার্চে এই বৃত্তির আওতায় আনা হয়। বর্তমানে হৃদুল ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। স্নাতকোত্তর পর্ব পর্যন্ত তাদের দেওয়া হবে এই বৃত্তি।
মৃদুল জানালেন, ‘বাবাকে হারিয়ে কষ্ট পেয়েছি কিন্তু পড়াশোনা থেকে দূরে থাকেনি। এখন বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে নটর ডেম কলেজে ভর্তি হয়েছি। সাভার সহায়তা তহবিল থেকে বৃত্তি পাওয়ায় আমার লেখাপড়া করা অনেক সহজ হয়েছে। গত বছর থেকে আমার ছোট ভাইকেও বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। প্রথম আলো ট্রাস্টের এই সহযোগিতা আমার মায়ের ওপর চাপ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। এভাবে আমাদের পাশে থাকলে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব আশা করি।’
স্বামীকে হারানোর পর মৃদুল ও হৃদুলের মা মুক্তা আক্তার জীবিকার তাড়নায় মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। পরে চাকরি ছেড়ে ঘরেই সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তারা মিরপুর ১৪ নম্বরে ভাড়া বাসায় থাকেন। এখন ছেলে দুইজনকে মানুষের মত মানুষ করাই তাঁর একমাত্র ইচ্ছা।