এক যুগ পরেও রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে প্রথম আলো ট্রাস্ট

মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল থেকে এককালীন অনুদান পাওয়া ও শিক্ষা-বৃত্তিপ্রাপ্তদের একাংশ।ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল। ওই দিন ঢাকার উপকণ্ঠে সাভারে নয়তলা রানা প্লাজা ভবন ধসে পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজারের বেশি শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন সহস্রাধিক শ্রমিক। আজ বৃহস্পতিবার রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পূর্ণ হলো।

দুর্ঘটনার ১২ বছর কেটে গেলেও ক্ষত মুছে যায়নি এখনো। যারা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়েছেন তারা প্রতি নিয়ত বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দিনের দুঃস্মৃতি। আর যারা স্বজন হারিয়েছেন তারা শুধু স্বজন নয় হারিয়েছিলেন বেঁচে থাকার সাহসটুকুও। থমকে গিয়েছিল ছোট ছোট চোখগুলো জুড়ে থাকা বড় বড় স্বপ্ন। মেরিল-প্রথম আলো ট্রাস্ট সাভার সহায়তা তহবিল সেই স্বপ্নগুলোকে ঝরে যেতে দেয়নি। থামতে দেয়নি তাদের পথ চলা। সাহস জুগিয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।

ঘুরে দাঁড়ানোর ৬ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
ছবি: প্রথম আলো

রানা প্লাজা ধসের প্রথম দিন থেকেই প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ওষুধ ও সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালগুলোতে কাজ শুরু করে। তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনায় পতিত এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য খাবার, স্প্রে, অক্সিজেন ও পানি সরবরাহ করা হয়। পরে ২৬ এপ্রিল গঠন করা হয় সাভার সহায়তা তহবিল। তহবিলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সহায়তা প্রদান করেন। সব মিলিয়ে এই তহবিলে বিভিন্ন সময়ে জমা হয় প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তহবিল থেকে প্রায় ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয় উদ্ধারকাজ ও চিকিৎসায়। ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় ক্ষতিগ্রস্ত ১০১ জনের পুনর্বাসন সহায়তায়। ১০১ জনের মধ্যে ১০০ জনকে ১ লাখ টাকা এবং একজনকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা আমানতপত্র প্রদান করা হয়েছে। । সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনুপাত ছিল, আহত নারী ৪৭ জন, আহত পুরুষ ৩৯, উদ্ধারকর্মী ৫ ও এতিম (নিহত শ্রমিকদের সন্তান) ১০ জন।

মেরিল-প্রথম আলো ট্রাস্ট সাভার সহায়তা তহবিল সেই স্বপ্নগুলোকে ঝরে যেতে দেয়নি। থামতে দেয়নি তাদের পথ চলা। সাহস জুগিয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
প্রথম আলো ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়ার সঙ্গে শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্পে সদ্য যুক্ত হওয়া ৪ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে।
ছবি: প্রথম আলো।

এ ছাড়া তহবিলের বাকি টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতপত্র করা হয়। এই আমানত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২০ সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। প্রকল্পের আওতায় ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে পড়াশোনা করছে। ইতিমধ্যে একজন স্নাতক ও দুজন ডিপ্লোমা শেষ করেছে, অন্যরা বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে এই শিক্ষাবৃত্তি শুরু করা হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত দেওয়া হবে এই শিক্ষাবৃত্তি।

উল্লেখ্য, ওই বছর ২৬ এপ্রিল পূর্ব নির্ধারিত মেরিল-প্রথম আলো অনুষ্ঠানটি ছিল শোকের পরিবেশ। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার-২০১৩-এর অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় রানা প্লাজা ধসে দুর্গত ব্যক্তিদের। অনুষ্ঠানে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এক দিনের বেতন থেকে প্রাপ্ত ২ লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল গঠনের ঘোষণা দেন। স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী অনুদান দেন ১০ লাখ টাকা। একে একে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এতে অনুদান দেয়। এই তহবিল থেকেই রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট।