আরও চার আহতের সন্তান পেল সাভার সহায়তা তহবিল শিক্ষাবৃত্তি

প্রথম আলো ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়ার সঙ্গে শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্পে সদ্য যুক্ত হওয়া ৪ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা। আজ ১৫ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে।

আমি রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডের ফিনিশিং বিভাগে জুনিয়র ফোল্ডিংম্যান হিসেবে কাজ করতাম। রানা প্লাজা ধসে আমি মারাত্মকভাবে আহত হই। আঘাতজনিত কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত দুই পা, মেরুদণ্ড ও কোমরের হাড় ভেঙে যায়। অপারেশন করে রড লাগানো আছে এখনো—কথাগুলো রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিক মোছা. বেলি বেগমের। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার দক্ষিণ হাটবামুনী গ্রামে। বর্তমানে তিনি স্বামী রোস্তম আলীর সঙ্গে টঙ্গীতে থাকেন। স্বামী অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চালান। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে রাকিব আলী আকন্দ এ বছর (২০২৪) এসএসসি পাস করে আশুলিয়াতে পলিটেকনিকে ভর্তি হয়েছে। এমতাবস্থায় বেলির চিকিৎসা ও অটো চালিয়ে সংসার চালানো ও ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে রোস্তম আলীর পক্ষে। পড়াশোনার পথকে সহজ করার লক্ষ্যে রাকিব আলীকে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের শিক্ষাবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক শামীমা আক্তার আদুরীর ছেলে আলিফ হাসান জীবন শিক্ষাবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষাবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া আলিফ হাসান জীবনের মা শামীমা আক্তার আদুরী। তিনি রানা প্লাজায় আহত শ্রমিক। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মস্তিষ্কে ও মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত পান। দীর্ঘদিন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। সাভারে বসবাসরত শামীমা আপাতত কিছু করেন না। স্বামী বর্তমানে বাসের কাউন্টারে কাজ করে সংসার চালান। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে বয়স দুই। এমতাবস্থায় বাসের শামীমার অসুস্থতা ও স্বামীর অল্প আয়ে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানো কঠিন। ছেলের শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ায় অনেকটা চিন্তামুক্ত হয়েছেন শামীমা রসুল দম্পতি।

বেলি বেগম ও শামীমা আক্তারের মতো আরও দুই আহত শ্রমিক হলেন আলমগীর হোসেন ও জসিউল জুয়েল। তাদের অবস্থাও অনকেটা নাজুক। সন্তানের পড়াশোনার খরচের জন্য আবেদন করেছেন প্রথম আলো ট্রাস্টে। আলমগীর হোসেনের ছেলে আরাফাত হোসেন ও জসিউল জুয়েলের মেয়ে নাবিলা হোসেনকেও মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের শিক্ষাবৃত্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

প্রথম আলো ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক ও উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া এবং প্রথম আলো ট্রাস্টের সহকারী কর্মসূচি ব্যবস্থাপক নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে শিক্ষাবৃত্তি প্রকল্পে সদ্য যুক্ত হওয়া ৪ শিক্ষার্থী। আজ ১৫ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে প্রথম আলো ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রথম আলো ট্রাস্ট আহত ও নিহত পরিবারের পাশে আজও আছে। আজও নিয়মিত যোগাযোগ ও শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছে। যত দিন পড়াশোনা করতে চায়, তাদের আমরা পড়াশোনা জন্য সহায়তা দেব। কারণ শিক্ষাই আমাদের জাগ্রত করতে পারে, আমাদের জীবনের পরিবর্তন এনে দিতে পারে।

আজ ১৫ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রানা প্লাজায় আহত পোশাকশ্রমিকদের আরও ৪ সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া। নতুন যুক্ত হওয়া চার শিক্ষার্থীরা হলো নাবিলা হোসেন জান্নাত (স্নাতক প্রথম বর্ষ), মো. রাকিব আলী আকন্দ (ডিপ্লোমা প্রথম বর্ষ), মো. আরাফাত হোসেন জিহাদ (নবম শ্রেণি) ও মো. আলিফ হাসান জীবন (৪র্থ শ্রেণি)। স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত দেওয়া হবে এই শিক্ষাবৃত্তি।

উল্লেখ্য, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পোশাকশ্রমিকদের ২০ সন্তানকে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষাবৃত্তি। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই শিক্ষাবৃত্তি শুরু করা হয়। এই ২০ জনের মধ্যে চার পড়াশোনা করছেন না। জানা গেছে জান্নাতুল ফেরদৌস, মাহিয়া আক্তার ও শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়ে গেছে এবং মেহেদী হাসান পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সাভারে এক পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছে। তারা আর পড়াশোনা করতে আগ্রহী নয়। তাই এই চারজনের স্থলে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের নতুন চারজনকে স্থলাভিষিক্ত করা হলো।