রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পাশে আছে প্রথম আলো ট্রাস্ট

রানা প্লাজায় আহত ও নিহত পরিবারের ২০ শিক্ষার্থী পাচ্ছেন প্রথম আলো ট্রাস্টের শিক্ষাবৃত্তি।

২০১৩ থেকে ২০২৪—এই ১১ বছরে মায়ের স্মৃতি অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে পাপিয়ার কাছে। পাপিয়ার মা পারভীন বেগম রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজার দুর্ঘটনার ১০ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে মায়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মায়ের মৃত্যুর শোক, রিকশাচালক বাবার উপার্জনে সংসার চালানো—সবকিছু মিলে এলোমেলো হয়ে যায় পাপিয়ার পরিবার। পড়াশোনা  যখন বন্ধ হওয়ার জোগাড়, সে সময়ে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল থেকে শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আবার পাপিয়ার পড়াশোনা শুরু হয়। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পাপিয়া বৃত্তি পেতে শুরু করে। এই বছর সাভার মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন পাপিয়া। এই শিক্ষাবৃত্তি স্নাতকোত্তর পর্যন্ত চলমান থাকবে।

কেবল পাপিয়া নয়, পাপিয়ার মতো রানা প্লাজায় আহত ও নিহত পরিবারের ২০ শিক্ষার্থী পাচ্ছেন এই শিক্ষাবৃত্তি। ২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিলের ঠিক দুই দিন পরই পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ওই বছরের অনুষ্ঠানটি রানা প্লাজায় হতাহত ব্যক্তিদের উৎসর্গ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এক দিনের বেতন থেকে প্রাপ্ত দুই লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের ঘোষণা দেন। এরপর স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ১০ লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন। একে একে এগিয়ে আসেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। বিনোদনজগতের তারকারা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আলো হাতে দাঁড়ালেন রানা প্লাজার হতাহতদের পাশে। ২০১৩ সালের ২৬ এপ্রিল রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দুই দিন পর মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের আয়োজনের দিন ৫৪ লাখ টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল’। একে একে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই তহবিলে অনুদান দেন।

সব মিলিয়ে সাভার সহায়তা তহবিলে বিভিন্ন সময়ে জমা হয় প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তহবিল থেকে প্রায় ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয় উদ্ধারকাজ ও চিকিৎসায়। ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা খরচ হয় ক্ষতিগ্রস্ত ১০১ জনের পুনর্বাসন সহায়তায়। ১০১ জনের মধ্যে ১০০ জনকে ১ লাখ টাকা এবং একজনকে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৫০ হাজার টাকা আমানতপত্র প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া তহবিলের বাকি টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতপত্র করা হয়। এই আমানত থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২০ সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে প্রথম আলো ট্রাস্ট।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পোশাকশ্রমিক ও কর্মচারী ২০ জনের সন্তানকে এ তহবিলের অধীনে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে এই শিক্ষাবৃত্তি শুরু করা হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত দেওয়া হবে এই শিক্ষাবৃত্তি।