সাদত স্মৃতি পল্লীতে বয়স্কদের ঈদ উপহার প্রদান
হতদরিদ্র আব্দুর রাজ্জাক (৭৫) দড়ি হাইরমারা গ্রামের মৃত জনাব আলীর ছেলে। দারিদ্র্যে কষাঘাতে শারীরিকভাবে নুব্জ আব্দুর রাজ্জাক পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর একমাত্র ছেলে বিভিন্ন মানুষের দোকানে কাজ করে নিজের সংসার চালানোই কষ্টকর। সেইখানে বৃদ্ধ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার দড়ি হাইরমারা গ্রামে সাদত স্মৃতি পল্লী প্রকল্পে আব্দুর রাজ্জাকের মতো ৬০ জন বয়স্ক নারী-পুরুষ মাসিক ভাতা পান।
গত সাত মাস আগে আব্দুর রাজ্জাক বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তিতে তালিকাভুক্ত হন। রমজানে ইফতার, ঈদ সামগ্রি ও ঈদ উপহার পেয়ে তিনি খুশিতে কেঁদে ফেলেন আর প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সবার জন্য দোয়া করতে থাকেন।
বীরকান্দি গ্রামের মরহুম দুলাল মিয়ার স্ত্রী মোমেনা বেগম (৭০) মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পান তাই দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করেন। তার একমাত্র ছেলে টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে, বউ বাচ্চা নিয়ে জেলা শহরে থাকে। মোমেনা বেগমের কোন প্রকার দেখভাল করে না। চার মাস আগে থেকে প্রকল্পের ভাতা প্রাপ্তিতে তালিকাভুক্ত হন মোমেনা বেগম। প্রতিমাসের প্রাপ্ত ভাতা দিয়েই এখন কোন রকমে দিন কেটে যায় মোমেনা বেগমের। ইফতার ও ঈদ সামগ্রীর সাথে দুটি শাড়ি ও দুটি ব্লাউজ পেয়ে খুশি হন।
এদিকে সৈয়দ নেছার (৮০) ঘরে পুত্র বধূ থাকলেও এখনো নিজের রান্নাটুকুও নিজেরই করে খেতে হয় তাঁর। কেননা তিন সন্তানের একজনও তাকে যত্ন-আত্মি বা খাবার দেন না নিয়মিত। তাঁর ছেলেরা পাকা ঘরে থাকলেও সৈয়দ নেছা থাকেন স্যাঁত-স্যাঁতে ভাঙা বেড়াওয়ালা অন্ধকার কুঁড়ে ঘরে। শারীরিক দুর্বলতার কারণে কখনো কখনো রান্না করতে না পারায় না খেয়েই থাকতে হয় তাকে। দিনের পর দিন নোংরা হওয়া বিছানাও পরিষ্কার করে দেয় না কেউ। দীর্ঘদিন যাবৎ প্রকল্প থেকে পাওয়া বয়স্ক ভাতার টাকায় চলে তার খাওয়া-দাওয়া। সৈয়দ নেছা মেহেরনগর গ্রামের মরহুম চাঁন মিয়ার স্ত্রী।
রমজান উপলক্ষে বয়স্ক ভাতা প্রাপ্ত প্রত্যেককে ইফতার সামগ্রীর সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০০ করে টাকা প্রাদান করা হয় দুধ-কলা কিনে খাবার জন্য। ঈদ উপলক্ষে ভাতা প্রাপ্ত প্রত্যেক মহিলাকে দুটি করে শাড়ি, দুটি ব্লাউজ-পেডিকোটের কাপড় সেলাই খরচসহ প্রদান করা হয়। পুরুষ ভাতা প্রাপকদের দুটি লুঙ্গি, দুটি পাঞ্জাবির কাপড় সেলাই খরচসহ প্রদান করা হয়। ভাতা প্রাপ্ত যাদের স্বামী বা স্ত্রী রয়েছেন তাদের প্রত্যেকের স্বামী ও স্ত্রীকে দুই সেট করে ঈদ উপহার প্রদান করা হয়েছে। সাথে সবাইকে ঈদ সামগ্রী হিসেবে পোলাও চাল, সেমাই, চিনি, কিসমিস, দুধ, তেল, ডাল, লবন, ও সাবানসহ একসঙ্গে মে মাসের ভাতাও প্রদান করা হয়েছে।
এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত সহযোগিতায় প্রথম আলো ট্রাস্ট প্রকল্পটি পরিচালনা করছে।