নিজেরাই আয়োজন করল চড়ুইভাতি, দিনভর মেতে ছিল শিশুরা

প্রায় এক ঘণ্টার বৃষ্টির কারণে মাঠে বসে চড়ুইভাতি খাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় সবাই। উপায় না পেয়ে প্রকল্পের বারান্দায় বসে খাবার খেতে হয় শিশুদের।

শনিবার সকাল নয়টা। সাদত স্মৃতি পল্লীতে বাড়তে থাকে শিশুদের আনাগোনা। একে একে উপস্থিত হয় শিশু-বিকাশ কেন্দ্রের ৪৮ জন শিক্ষার্থী। শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেঘনার তীর ঘেঁষা নরসিংদীর দড়ি হাইরমারা গ্রামের সাদত স্মৃতি পল্লী। সাদত স্মৃতি পল্লীর নিয়মিত কার্যক্রমের মধ্যে শিশু-বিকাশ কেন্দ্র কার্যক্রমটি উল্লেখযোগ্য। গতকাল এই কেন্দ্রের শিশুদের আয়োজন ও অংশগ্রহণে ছিল চড়ুইভাতি উৎসব।

শিশু-বিকাশ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা এ আয়োজন করে। তারা জন প্রতি ৫০ টাকা করে সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করে। খরচের বাকি টাকা প্রকল্পের সকল স্টাফ ও পরিচালক বহন করেন।

চড়ুইভাতি আয়োজনে দিনভর মেতে ছিল শিশুরা।

শিশু-বিকাশ কেন্দ্রের ক্লাস ক্যাপ্টেন সাম্মি ও কো-ক্যাপ্টেন ইনার হাতে বাজার খরচের সকল টাকা তুলে দেওয়া হয়। তারা নিজেরা বাজারে গিয়ে জিনিসপত্রের দরদাম করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে। তাদের বাজারে সহযোগিতা করার জন্য প্রকল্পের ৩ জন স্টাফ ছিলেন। সকল শিশুদের আবদার ছিল চড়ুইভাতিতে ওরা বিরিয়ানি খাবে। তাই বাজার থেকে বিরিয়ানি সামগ্রীই ক্রয় করা হয়।

প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের পর শুরু হয় রান্নার আয়োজন। আদা, রসুন ও পেঁয়াজ কাটাকাটি, বাটাবাটিতেও ছিল শিশুদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। রান্নায় সহযোগিতার জন্য স্থানীয় একজন বাবুর্চি রাখা হয়। বাবুর্চির নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা রান্নার কাজকে এগিয়ে নেয়। আরেক দল সাড়ে এগারোটার দিকে মুড়ি-চানাচুর মাখা তৈরি করে। কাজের ফাঁকে একটু মুড়ি মাখা হলে মন্দ হয় না। মুড়ি মাখা হলে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সবাই মিলে মুড়ি ভোজে অংশ নেয়।

চড়ুইভাতি আয়োজনে দিনভর মেতে ছিল শিশুরা।

রান্না শেষ হলে শিশুরা গোসল শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এরই মধ্যে শিশুদের আনন্দে বাঁধ সাধে বৃষ্টি। প্রায় এক ঘণ্টার বৃষ্টির কারণে মাঠে বসে চড়ুইভাতি খাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় সবাই। উপায় না পেয়ে প্রকল্পের বারান্দায় বসে খাবার খেতে হয় শিশুদের।

খাবার শেষে শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় বিনা মূল্যের লটারি। ৪৮ জন শিশুর জন্য বক্সে টোকেন রাখা ৪৮ টি। প্রতি টোকেনেই নিশ্চিত উপহার। প্রতিটি উপহারের গায়ে লেখা নম্বরের সঙ্গে টোকেনে লেখা নামার মিলিয়ে উপহারটি বিজয়ীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। উপহার পাওয়া শিশুকে অভিনন্দন জানাতে অন্য শিশুরা মুহুর্মুহু হাততালি দিতে থাকে। বৃষ্টির কারণে লটারি পরিচালনার কাজটিও ক্লাস রুমেই করতে হয়। বৃষ্টি ছাড়লে খেলার মাঠে খেলাধুলা, নাচ, গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।

শিশু-বিকাশের শিক্ষার্থী ও ক্লাস কো-ক্যাপ্টেন ইনার ভাষায়, ‘আমাদের অনেক দিনের ইচ্ছা আমরা এমন একটা চড়ুইভাতি করব। আজকে সবাই মিলে করতে পেরেছি। এতেই অনেক আনন্দ হয়েছে।’ আরেক শিক্ষার্থী স্বময় বলে, ‘অনেক আনন্দ লাগছে। খাবারও অনেক স্বাদ হয়েছে।’

শেলটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি পরিচালনা করে প্রথম আলো ট্রাস্ট।