বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ
ব্যাচ সেরা শিক্ষার্থী হয়ে সেলাই মেশিন উপহার পেয়েছেন সাবিকুন্নাহার
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দড়ি হাইরমারা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আল আমিনের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার। আল আমিন বেশ কয়েক মাস আগে প্রবাসে গেলেও তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেননি এখনো। এদিকে অভাবের সংসারে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সাবিকুন্নাহার কোনোমতে চালিয়ে নিচে ছন। সংসারে একটু আয়ের জোগান দিতে সাদত স্মৃতি পল্লীর বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দ্বিতীয় ব্যাচের ভর্তি হন সাবিকুন্নাহার। সম্প্রতি তিনি সেলাই প্রশিক্ষণটি সম্পন্ন করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তিনি নিজেই জামাকাপড় তৈরি করতে পারেন। এখন পর্যন্ত তিনি তাঁর মায়ের জন্য ২টি ব্লাউজ,২টি করে পেটিকোট প্লাজু ও হিজাব বানিয়ে দিয়েছেন। তার নিজের মেয়ের জন্য একাধিক প্যান্ট ও জামা বানিয়েছেন। তাঁর ছেলের জন্য কয়েকটি ফতোয়া বানিয়েছেন।
এই গ্রামের প্রায় ঘরেই সেলাই মেশিন থাকায় তেমন কাজ পাওয়া যায় না। তবে এক প্রতিবেশীর জামা বানিয়ে ১০০ টাকা পেয়েছেন। বাবার অভাবের সংসারে বড় হওয়া সাবিকুন্নাহারের দশম শ্রেণিতে অবস্থায় বিয়ে হয়ে যাওয়ায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তাঁর। এদিকে বিয়ের আগে থেকেই তাঁর সেলাই শেখার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কোনোভাবেই সেটা হয়ে ওঠেনি। তারপরেও সে থেমে থাকেনি। ছোটবেলায় এক চাচির সেলাই কাজ দেখতেন। সেটা দেখে দা দিয়ে কাপড় কেটে হাতে সেলাই করতেন। হাতে সেলাই করে পুতুলের জন্য অসংখ্য জামা বানিয়েছেন। পুতুলের জামা বানাতে বানাতে এক সময় দা দিয়ে কেটেই নিজের জন্য অনেক জামা তৈরি করেছেন। মেশিন ছাড়াই নিজের হাতে সেলাই করেছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে টানাটানির সংসার কোন রকমে কাটছে তাঁর।
সাদত স্মৃতি পল্লীতে ২০২৪ সালে চালু হওয়া বিনা মূল্যের সেলাই প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ব্যাচ সেরা শিক্ষার্থী হিসেবে সাদত স্মৃতি পল্লী থেকে উপহার হিসেবে পান ১টি সেলাই মেশিন। এখন তিনি নতুন সেলাই মেশিন দিয়ে সকল সেলাইয়ের কাজ করেন।
সাবিকুন্নাহার বলেন, ‘আমার ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল সেলাই কাজ শিখব। আপনারা সেলাই শেখান হুইন্নাই গেছি। আগে আমি কাপড়ের মাপ-জোক বুঝতাম না। দা-বটি দিয়া কাইট্টা হাতে সিলাইয়া কাপড় বানাইছি। এখন সেলাই শিখার পরে আর কোনো সমস্যা নাই।’
নরসিংদীর দড়ি হাইরমারা গ্রামে অবস্থিত সাদত স্মৃতি পল্লীতে দরিদ্র, অসহায় মহিলাদের জন্য ৪ মাস মেয়াদি বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ৫০ টাকা ভর্তি ফি ছাড়া এখানে আর কোন প্রকার খরচ নেই। চলতি অক্টোবর মাসের ৫ তারিখ থেকে ৫ম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়েছে। ৫ম ব্যাচে ৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪টি ব্যাচে মোট ২০ জন শিক্ষার্থী যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বর্তমানে নিজেদের মতো করে প্রত্যেকেই কাজ করার চেষ্টা করছেন।
শেলটেক গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদের ব্যক্তিগত আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি পরিচালনা করে প্রথম আলো ট্রাস্ট।